সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবাল , গুরুত্ব | Cyanobacteria or Blue Green Algae

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবাল | Cyanobacteria or Blue Green Algae

সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ - সবুজ শৈবাল হল গ্রাম পজিটিভ (Gram +) সালোকসংশ্লেষীয় প্রোক্যারিয়ট। এদের সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জুক হল – ক্লোরোফিল a, ক্যারোটিনয়েড এবং ফাইকোবিলিন। এদের সঞ্চিত খাদ্য হল — সায়ানোফাইসিয়ান শ্বেতসার (Cyanophycean starch), ফ্যাট দানা এবং প্রোটিন দানা ।

উদাহরণ (Example) : Anabaena, Nostoc, Oscillatoria, Arthozpora, Rivularia ইত্যাদি।


বাসস্থান (Occurance) : এরা মিঠে জল, সমুদ্রের জল, লবণাক্ত জলাশয়, ভিজে পাথর খণ্ড, ভিজে মাটি, উপ্রস্রবণ ইত্যাদি স্থানে বসবাস করে।


সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা নীলাভ সবুজ শৈবাল গুরুত্ব (Importance) :

(i) নীলাভ-সবুজ শৈবাল জলজ প্রাণীর খাদ্য। স্পাইরুলিনা (Spirulina) আফ্রিকায় প্রোটিনের উৎসরূপে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নস্টক (Nostoc) চিন দেশে ব্যবহৃত হয়।

(ii) বেশিরভাগ সায়ানোব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন সংবন্ধন ঘটিয়ে জমির নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে জমি উর্বর হয়।

(iii) সায়ানোব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড সরবরাহ করে জমির ক্ষারকতা (alkalimity) কমায়।

(iv) Lyngbya নামক সায়ানোব্যাকটেরিয়া থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুত হয়।

(v) সায়ানোব্যাকটেরিয়া (Anabaena, Aulosira) মশার লার্ভা দশায় বংশবিস্তার রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।

(vi) বাড়ির দেওয়াল ও ছাদে সায়ানোব্যাকটেরিয়া জন্মালে ঘরের রং নষ্ট হয়ে যায় এবং ছাদ ফুটো হয়ে যায়।

(vii) এরা ওয়াটার ব্লুম (water blooms) সৃষ্টি করে জলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।

(vii) Microcystis aeruginosa, Anabaena flosaquae একধরনের টক্সিন (toxin) ক্ষরণ করে জলজ প্রাণীর মৃত্যুর কারণ ঘটায়।


শেবাল এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রে ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস (Dinoflagellates) :

(i) প্রধানত সামুদ্রিক এককোশী শৈবাল। Gymnodinium, Gonyaulax প্রভৃতি প্রজাতি লাল বর্ণের হওয়ায় সমুদ্রের জলকেও লাল বর্ণের করে দেয়।

(ii) কোশটি দুটি খণ্ডে বিভক্ত—ওপরের খণ্ডটিকে এপিভালভ (Epivalve) বা এপিকোন (Epicone) বলে এবং নীচের অংশটিকে হাইপোভালভ (Hypovalve) বা হাইপোকোন (Hypocone) বলে। এই দুটির সংযোগস্থলে বন্ধনীর মতো অংশ থাকে যাকে গার্ডেল (Girdle) বা সিঙ্গুলাম (Cingulum) বলে।

(iii) কোশটি স্থূল সেলুলোজের আবরণী দিয়ে আবৃত যাকে থিকা (Theca) বলে।

(iv) দুটি ফ্ল্যাজেলা উপস্থিত একটি ফ্ল্যাজেলাম কোশের মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে থাকে (trans- verse flagellum) এবং অপর ফ্ল্যাজেলামটি কোশের এক প্রান্ত থেকে লম্বালম্বিভাবে থাকে (longitudinal flagellum)।

(v) সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক ক্লোরোফিল a ও c এবং পেরিডিনিন ও নিওপেরিডিনিন প্রধান ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক।

(vi) ক্লোরোপ্লাস্টে পাইরিনয়েড উপস্থিত।

(vii) সঞ্চিত খাদ্যবস্তু স্টার্চ।

(viii) চক্ষুবিন্দু উপস্থিত।

(ix) নিউক্লিয়াসটির আকৃতি বৃহৎ ও মেসোক্যারিওটিক (mesokaryotic) প্রকৃতির।

(x) অযৌন জনন কোশ বিভাজন বা সিস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে হয়। যৌন জনন প্রধানত আইসো বা অ্যানাইসোগ্যামি প্রকৃতির। 

উদাহরণ ঃ Peridinium, Ceratium, Notiluca, Glunodinum, Gumnodinum, Gonyaulax।


1. ক্রাইসোফাইটস (Chrysophytes) :

(i) এককোশী সামুদ্রিক শৈবাল যাদের সাধারণভাবে ডায়াটম (Diatom) বলে।

(ii) কোশপ্রাচীরে সেলুলোজ ছাড়াও প্রচুর সিলিকন থাকে। কোশ প্রাচীরকে ফ্রিসটিউল (Frustule) বলে যা সিলিকার বিভিন্ন স্তরীভবনের ফলে অত্যন্ত সুন্দর দেখায়।

(iii) কোশপ্রাচীর এপিথিকা (Epitheca) ও হাইপোথিকা (Hypotheca) নামক দুটি ভালভ বা ঢাকনির মতো আবরণী দিয়ে গঠিত।

(iv) কোশ নিশ্চল, ফ্ল্যাজেলাবিহীন কিন্তু গ্যামেটে একটি মাত্র ফ্ল্যাজেলা থাকে।

(v) রঞ্জক কণা ক্লোরোফিল a ও c এবং প্রধান জ্যান্থোফিলগুলি হল ফিউকোজ্যানথিন, ডায়াটোজ্যানথিন ও ডায়াডিনো জ্যানথিন।

(vi) সঞ্চিত খাদ্যবস্তু তৈলবিন্দু, ভলিউটিন (Volutin) ও ক্রাইসোল্যামিনারিন (Chrysolaminarin) জাতীয়

পলিস্যাকারাইড। চমাধ্যমিক জীববিদ্যা

(vii) কোশ ডিপ্লয়েড, পিনেলিস বর্গের (Pennales) কোশ অনুদৈর্ঘ্যভাবে এবং সেন্ট্রালিস বর্গের (Centrales) কোশ অরীয়ভাবে প্রতিসম।

(viii) সচরাচর কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি করে। ডিপ্লয়েড কোশ আইসোগ্যামি ও ঊগ্যামি পদ্ধতিতে যৌন জনন করে। কোশ বিভাজনের ফলে কোশের আকৃতি ছোটো হয়ে যায় তখন ডায়াটম অক্সোরেণু (Auxospore) উৎপাদন করে পুনরায় স্বাভাবিক আকৃতি লাভ করে।

উদাহরণ : Melosira ও Biddulphia (সেন্ট্রালিস); Navicula ও Synedra, Triceratum, Coscinodiscus, Melosia, Licmophora |


3. ইউগ্লিনয়েডস (Euglenoids) ঃ এই বিশেষ গোষ্ঠীর জীবদের ফ্ল্যাজেলা উপস্থিত এবং কোশপ্রাচীরের বদলে পেলিকল থাকে। ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় এই ধরনের প্রোটিস্ট সালোকসংশ্লেষে সক্ষম। ইউগ্লিনয়েডসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(i) সচরাচর মিষ্টি জল (fresh water) এবং আর্দ্র মৃত্তিকায় বসবাস করে ।

(ii) ইউগ্লিনয়েডরা এককোশী ফ্ল্যাজেলাযুক্ত প্রোটিস্ট।

(iii) কোশপ্রাচীর অনুপস্থিত, কোশ পেলিকল (Pellicle) নামক আবরণী দিয়ে আবৃত। পেলিকলে তির্যক কিন্তু সমান্তরালভাবে অবস্থিত মায়োনিম (Myoneme) নামক সংকোচনশীল প্রোটিন তন্তু বর্তমান।

(iv) ব্লেফারোপ্লাস্ট (Blepharoplast) নামক বেসাল দানা থেকে ফ্ল্যাজেলামটি উৎপন্ন হয়।

ফ্ল্যাজেলামের গায়ে সূক্ষ্ম চুলের মতো অসংখ্য উপাঙ্গ লক্ষ করা যায়। এই ধরনের ফ্ল্যাজেলাকে টিনসেল (Tinsel) ফ্ল্যাজেলাম বলে। অনেক প্রজাতিতে একাধিক ফ্ল্যাজেলা থাকে।

(v) কোশের অগ্রপ্রান্তে একটি ফ্লাস্ক আকৃতির গহ্বর থাকে যাকে রিজারভার (Reservoir) বলে। এটি

ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে সাইটোফ্যারিংক্স (Cytopharynx) গঠন করে যা কোশের বাইরে সাইটোস্টোম (Cytostome) নামক ছিদ্রের মাধ্যমে উন্মুক্ত হয়।

(vi) কোশের বাইরের দিকের লঘু সাইটোপ্লাজমযুক্ত  অঞ্চলকে এক্টোপ্লাজম (Ectoplasm) এবং ভিতরের ঘন সাইটোপ্লাজমকে এন্ডোপ্লাজম (Endoplasm) বলে।

(vii) ক্লোরোপ্লাস্ট উপস্থিত থাকায় সালোকসংশ্লেষে সক্ষম অর্থাৎ, স্বভোজী প্রকৃতির হয়। রঞ্জককণা ক্লোরোফিল a ও ক্লোরোফিল b। ক্লোরোপ্লাস্টবিহীন প্রজাতিগুলি হলোজোয়িক প্রকৃতির, পরজীবী ও মৃতজীবী প্রজাতিও লক্ষ করা যায়।

(viii) সঞ্চিত খাদ্যবস্তু প্যারামাইলন বডি (Paramylon body) যা রাসায়নিকভাবে পলিস্যাকারাইড যাকে গ্লুকান বলে।

(ix) আলোকসুবেদী চক্ষুবিন্দু (Eye spot) উপস্থিত। উদাহরণ : Euglena, Phacus, Peranema প্রভৃতি।


খাদক-বিয়োজক প্রোটিস্ট বা স্লাইম মোল্ড (Consumer-Decomposer protists Slime moulds) ঃ এই ধরনের প্রোটিস্টের মধ্যে ছত্রাক ও প্রাণী উভয় গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যই থাকে। তাই এদের ছত্রাক প্রাণীও (Fungus-animal) বলা হয়। সাম্প্রতিককালের অনেক বৈজ্ঞানিক এদের প্রোটিস্টিয়ান ছত্রাক (Protistian fungi) নামেও অভিহিত করেন কারণ দেহ প্রোটোজোয়ার মতো অ্যামিবয়েড এবং ছত্রাকের মতো রেণু উৎপাদন করে।


সোহম মোল্ডের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল- (i) ক্লোরোফিলবিহীন প্রোটিস্ট। (ii) কোশপ্রাচীরবিহীন তবে রেণুতে সেলুলোজনির্মিত কোশপ্রাচীর উপস্থিত থাকতে পারে। (iii) জীবন চক্রের বিশেষ দশায় অ্যামিবয়েড চলনবিশিষ্ট কোশ দেখা যায়।

(iv) ক্লোরোফিল না থাকলেও বিভিন্ন রঞ্জককণার উপস্থিতির জন্য কোশ বিভিন্ন বর্ণের হয়। (v) পুষ্টি মৃতজীবী


অকোশীয় স্লাইম মোল্ড (Acellar slime mould) :

(i) অঙ্গজ দেহ বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত ও কোশপ্রাচীরবিহীন এবং অকোশীয় যাকে প্লাসমোডিয়াম (Plasmodium) বলে।

(ii) প্লাসমোডিয়াম ক্লোরোফিলবিহীন এবং বহু শাখান্বিত হয়। প্রতিটি শাখাকে ভেইন (Vein) বলে ।

(iii) এই ধরনের প্রোটিস্ট ডিপ্লয়েড (2n) প্রকৃতির এবং সমগ্র থ্যালাসটিই প্রজনন অঙ্গে রূপান্তরিত হয়। এই ধরনের প্রজাতিকে তাই হলোকাপিক (Holocarpic) প্রকৃতির বলা হয়।

(iv) প্রতিকূল পরিবেশে সমগ্র দেহটিই অসম আকৃতি বিশিষ্ট এবং কঠিন আবরণে আবৃত হয়ে সক্লেরোটিয়াম (Sclerotium) গঠন করে।

(v) ফলদেহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুলের মতো সূক্ষ্ম ফিলামেন্টের জালক লক্ষ করা যায় তাকে ক্যাপিলেসিয়াম (Capillatium) বলে।

(vi) প্রতিটি রেণু অঙ্কুরিত হয়ে নগ্ন প্রোটোপ্লাজমযুক্ত সচরাচর দুটি ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট যে গমনক্ষম কোশ (Swarm cell) গঠন করে তাকে মিক্সামিবা (Myxamoeba) বলে। কোশের অগ্রভাগ থেকে উৎপন্ন দুটি ফ্ল্যাজেলা সচরাচর অসম দৈর্ঘ্যসম্পন্ন হয়।

(vii) মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় রেণু উৎপন্ন হয় বলে মিক্সামিবা হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির হয়।


কোশীয় স্লাইম মোল্ড — অ্যাক্রাসিওমাইসেটিস (Cellular slime mould - Acrasiomycetes :

(i) আর্দ্র মৃত্তিকায় বসবাস করে।

(ii) দেহ এককোশী, একনিউক্লিয়াসযুক্ত, হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতির ও অ্যামিবার মতো আকৃতিবিশিষ্ট এই ধরনের কোশকে মিক্সামিবা (Myxamboebae) বলে।

(iii) কোশ ফ্যাগোট্রফিক প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়াজাতীয় অণুজীব গ্রাস করে পরিপাক করে।

(iv) প্রতিকূল পরিবেশে মাইক্রোসিস্ট (Microcyst) গঠন করে। এই সময়ে মিক্সামিবা সেলুলোজ নির্মিত স্থূল প্রাচীর দ্বারা

আবৃত হয়। অনুকূল পরিবেশে মাইক্রোসিস্ট বিদারিত হয়ে অ্যামিবয়েড কোশ নির্গত হয়।

(v) পরিবেশে যখন খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা যায় তখন অনেকগুলি অ্যামিবয়েড কোশ একত্রিত হয়ে ছদ্ম প্লাসমোডিয়াম (Pseudoplasmodium) গঠন করে। এই কারণে এদের কমিউনাল স্লাইম মোল্ড (Communal slime mould) বলে।

(vi) ছদ্ম প্লাসমোডিয়াম থেকে বৃত্তযুক্ত স্পোরোকার্প (Sporocarp) সৃষ্টি হয় যার অগ্রপ্রান্তে রেণুস্থলী গঠিত হয়। প্রতিটি রেণু ডিম্বাকার, হ্যাপ্লয়েড প্রকৃতির এবং সেলুলোজ নির্মিত কোশপ্রাচীর দিয়ে আবৃত থাকে। প্রতিটি রেণু অঙ্কুরিত হয়ে এককোশী, নগ্ন (প্রাচীরবিহীন) মিক্সামিবা গঠন করে।


আদ্যপ্রাণী প্রোটিস্ট (Protozoan protists) :

(i) এককোশী, আণুবীক্ষণিক, প্রোটোপ্লাজম পেলিকল দ্বারা আবৃত, নির্দিষ্ট আকৃতি বিশিষ্ট (ব্যতিক্রম Amoeba)। প্রতিকূল পরিবেশে সিস্ট গঠন করতে পারে।

(ii) একটি কোশে উপস্থিত অঙ্গাণুগুলিই যাবতীয় বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

(iii) নিউক্লিয়াসের সংখ্যা একটি (Amoeba), দুটি (Paramoecium) বা অনেক (Opalina)।

(iv) ক্ষণপদ (Amoeba), সিলিয়া (Paramoecium) বা ফ্ল্যাজেলার (Euglena) দ্বারা গমন সম্পন্ন হয়। পরজীবী প্রাণীদের ক্ষেত্রে সচরাচর গমনাঙ্গ অনুপস্থিত।

(v) পুষ্টি প্রধানত হলোজোয়িক (Holozoic) অর্থাৎ, খাদ্যবস্তু ভক্ষণ ও পরিপাকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় (Amoeba), অনেক আদ্যপ্রাণী প্রোটিস্ট সালোকসংশ্লেষকারী ও স্বভোজী (Euglena), পরজীবী (Entamoeba) এমনকি মৃতজীবী হতে পারে।

(vi) দেহতলের মাধ্যমে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শ্বসন সম্পন্ন করে। পরজীবী প্রজাতিদের (Monocystis) মধ্যে অবাত শ্বসন দেখা যায়।

(vii) রেচন প্রক্রিয়া ব্যাপন পদ্ধতি বা সংকোচনশীল গহ্বরের (Contractile vacuole) সাহায্যে হয়। রেচন পদার্থ প্রধানত অ্যামোনিয়া ।

(viii) অযৌন জনন দ্বিবিভাজন ও বহু বিভাজন (Amoeba) প্রক্রিয়ায় হয়। যৌন জনন গ্যামেটের মিলন বা সিনগ্যামি (Syngamy) পদ্ধতিতে (Amoeba) অথবা সংশ্লেষ বা কনজুগেশন প্রক্রিয়ায় (Paramoecium) পদ্ধতিতে হয়।

(ix) জীবনচক্রে জনুক্রম দেখা যায়। গমনাঙ্গের ভিত্তিতে প্রোটোজোয়ান বা আদ্যপ্রাণী প্রোটিস্টাকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন—A. জুফ্ল্যাজেলেট, B. সারকোডিনা, C. স্পোরোজোয়া, D. সিলিয়েটা।


জুফ্ল্যাজেলেট বা ম্যাস্টিগোফোরা (Zooflagellata or 1

(i) এক বা একাধিক ফ্ল্যাজেলার মাধ্যমে গমন সম্পন্ন করে।

(ii) প্রধানত জলে বাস করে (Euglena), কিছু প্রোটিস্ট পরজীবী প্রকৃতির (Giardia) হয়।

(iii) নিউক্লিয়াস সংখ্যায় একটি।

(iv) কোশদেহ দৃঢ় পেলিকেল দিয়ে আবৃত।

(v) অযৌন জনন সচরাচর দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় হয়।

(vi) যৌন জনন সিনগ্যামি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

(vii) পুষ্টি পদ্ধতি অনুসারে এই অণুজীব মৃতজীবী, হলোজোয়িক বা পরজীবী প্রকৃতির হয়। কোনো কোনো প্রজাতি ক্লোরোফিল সমৃদ্ধ হওয়ায় সালোকসংশ্লেষ করতে পারে (Euglena)। উদাহরণ : Trypanosoma, Euglena, Giardia প্রভৃতি।


B. সারকোডিনা বা রাইজোপোডা (Sarcodina or Rhizopoda) :

(i) গমনাঙ্গ ক্ষণপদ। প্রোটোপ্লাজমে সল ও জেল (Sol and gel) এই দুটি অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে অস্থায়ী ক্ষণপদ সৃষ্টি করে।

(ii) ক্ষণপদের সাহায্যে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় খাদ্যগ্রহণ করে।

iii) প্রধানত মিষ্টি জলে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি সমুদ্রে বা আর্দ্র মাটিতে বসবাস করে।

(iv) দেহ নগ্ন বা প্লাজমোলেমা দ্বারা আবৃত।

(v) পুষ্টি হলোজোয়িক (holozoic) প্রকৃতির অর্থাৎ, খাদ্য উপাদান ভক্ষণ ও পরিপাক করে।

(vi) দেহে সচরাচর একটি নিউক্লিয়াস (Amoeba) থাকে। কোনো কোনো প্রজাতিতে দুটি নিউক্লিয়াস (Arcella ) বা অনেকগুলি নিউক্লিয়াস (Pelomyxa) থাকে। নিউক্লিয়াসগুলি একই আকৃতিবিশিষ্ট (Monomorphic) ।

(vii) দ্বি-বিভাজন, বহু বিভাজন বা রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন করে।

(viii) সিনগ্যামি (Syngamy) বা গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে নিষেক প্রক্রিয়ায় জাইগোট গঠন করে যৌন জনন সম্পন্ন করে।

উদাহরণ : অ্যামিবা, এন্টামিবা।


স্পোরোজোয়া (Sporozoa) :

(i) সমস্ত প্রকার গমনাঙ্গ অনুপস্থিত।

(ii) সব প্রজাতিই অন্তঃপরজীবী (Endoparasites)। স্বাভাবিকভাবেই পুষ্টি পরজীবী প্রকৃতির।

(iii) দেহ স্থিতিস্থাপক পেলিকল (Pellicle) বা কিউটিকল (Cuticle)

দিয়ে আবৃত।

(vi) সংকোচনশীল গহ্বর অনুপস্থিত।

(v) অযৌন জনন বহু বিভাজন প্রক্রিয়ায় ও যৌন জনন সিনগ্যামি

প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় ।

(vi) জীবন চক্রে অযৌন ও যৌন জনন দশা সুস্পষ্ট। উদাহরণ : মনোসিসটিস, প্লাসমোডিয়াম।


D. সিলিয়েটা (Ciliata) :

(i) সিলিয়ার সাহায্যে গমন করে। দেহের পৃষ্ঠতলে অসংখ্য সূক্ষ্ম সিলিয়া নির্দিষ্ট ছন্দে (মেটাক্রোনাস ছন্দ) সঞ্চালিত হয়ে প্রোটিস্টের গমন সম্পন্ন করে। এই ধরনের গমন অণুজীবকে খাদ্যের অভিমুখেও সঞ্চালিত করে।

(ii) অধিকাংশই জলজ ও স্বাধীনজীবী।

(iii) দেহ পেলিকল (Pellicle) দিয়ে আবৃত।

(iv) পুষ্টি প্রধানত হলোজোয়িক প্রকৃতির। কয়েকটি প্রজাতি পরজীবীত্ব (Balantidium) প্রদর্শন করে।

(v) খাদ্যগ্রহণকারী অঙ্গ ওরালগ্রুভ (Oral groove ), মুখ বা সাইটোস্টোম (Cytostome) এবং গালেট (Gullet) নিয়ে গঠিত।

(vi) নিউক্লিয়াসের দ্বিরূপতা (Dimorphism) দেখা যায়, সচরাচর কোশে একটি বড়ো (Macronucleus) ও একটি ছোটো (Micronucleus) নিউক্লিয়াস থাকে।

(vii) সংকোচনশীল গহ্বরের (Contractile vacuole) দ্বারা অভিস্রবণ ও রেচন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।

(viii) অযৌন জনন পার্শ্বীয় দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় এবং যৌন জনন সংশ্লেষ (conjugation) প্রক্রিয়ায় হয়।


উদাহরণ : Paramoecium caudatum, Vorticella, Opalina af Balantidium coli

মানব অস্ত্রে উপস্থিত একটি অন্তঃপরজীবী যা ডায়ারিয়া ও বৃহদন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে)। এই রোগকে সিলিয়ারি ডিসেন্ট্রি (Ciliary dysentery) বলে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url