বয়স অনুসারে পৌরবসতির শ্রেণীবিভাগ করো |

WhatsAp Group Join Now
Telegram Group Join Now

1. Stage বা বয়স অনুসারে পৌরবসতির শ্রেণীবিভাগ করো।

প্যাট্রিক গেডেসের ধারণাকে পরিমার্জন করে লুইস মামফোর্ড 1938 খ্রিস্টাব্দে সমস্ত ধরনের পৌরক্ষেত্রকে বয়সের ভত্তিতে মোট 6 টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। এগুলি হল—


1. ইয়োপলিস (Eeopolis) : মামফোর্ডের মতে, কোনোও পৌরবসতি বা শহর বা নগর গড়ে ওঠার আদিপর্ব হল ইয়োপলিস। এই পর্যায়ে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার ভাঙন শুরুর মাধ্যমে ধীরে ধীরে স্বল্প জনসংখ্যা ও সীমিত যোগাযোগ সম্পন্ন নগর সমাজ গড়ে ওঠে।


2. নগর (Polis) : পলিস আসলে একটি আধানগর সভ্যতা। এখানে বাজার এলাকা, আধা- অসমবিভাজন রীতি,হস্তশিল্প, বিজ্ঞান, ধর্মীয় উপাচার প্রভৃতি বিশেষভাবে আত্মপ্রকাশ করে। পলিস অঞ্চলের একাধিক কার্যাবলিকে

কেন্দ্র করে মানুষের সঙ্গে মানুষের মিথষ্ক্রিয়া প্রসারিত হয়। ফলে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। যেমন—মিশরের‌ আলেকজান্দ্রিয়া, গ্রিসের এথেন্স প্রভৃতি ।


3. মহানগর (Metropolis) : মামফোর্ডের মতে, নগর সভ্যতার পরিপূর্ণ তথা চূড়ান্ত বিকাশ এখানে দেখা যায়। তা ছাড়া এই স্থানগুলি একাধিক উপাদান দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যেমন—(i) শ্রমবিভাজন, (ii) প্রতীক সম্বলিত অর্থনৈতিক গঠন, (iii) আহার্য যোগানের নিরাপত্তা, (iv) অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন, (v) বহু মানসিকতা সম্পন্ন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত জনসংখ্যা, (vi) কৃষ্টিশীলতা, (vii) সাংস্কৃতিক বিনিময়, (viii) কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, (ix) ব্যক্তিগত অস্তিত্বের প্রভাব, (x) উদ্বাস্তুগত দিক প্রভৃতি।


4. মহানগরপুঞ্জ (Megalopolis) : কোনোও বিশালায়তন মহানগরের বিস্ফোরিত রূপকেই মামফোর্ড মেগালোপলিস বলেছেন। সাধারণত পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক শহর বা নগর সংযুক্ত হয়ে মেগালোপলিস গঠন করে। এখানকার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(i)এখানে অঞ্চলের সীমানাগত বিস্তৃতি অনেক বেশি।

(ii) নগর সম্প্রসারণের নীতি এখানে যথেষ্ট প্রাধান্য পায়।

(iii) সামরিক বা অর্থনৈতিক বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে এই জাতীয় পৌর এলাকা তার অস্তিত্ব রক্ষা করে।

(iv) ছোটো ছোটো প্রচুর সংখ্যক শহরাঞ্চল এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

(v) আমলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে।

(vi) আমোদ-প্রমোদ, শিল্পকলা, চারুকলা, স্থাপত্যকলা, শিক্ষা এবং একাধিক উচ্চস্তরের অর্থনীতির বিকাশ এখানে ঘটে।


5. টাইর‍্যানোপলিস (Tyranopolis) : নগরায়ণ প্রক্রিয়াটি যখন সমগ্র দেশটিকে গ্রাস করে, তাকেই মামফোর্ড টাইর্যানোপলিস বলেছেন। বস্তুত, এটি নগর বিকাশের চরমতম পর্যায় হলেও একে নগর অবনমনের সূচনা পর্বও বলা হয়। এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

(i) চূড়ান্ত পর্যায়ের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এখানে দেখা যায়।

(ii) করপ্রথা, বাজেট প্রভৃতি এখানকার অর্থনৈতিক পদ্ধতির মুখ্য প্রতীক।

(iii) অর্থনৈতিক শোষণ বা “White colour crime” এখানে লক্ষ করা যায়।

(iv) রাজনৈতিক পরিসর অর্থনীতিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

(v) দূষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

(vi) এখান থেকে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা, ছোটো ছোটো শহরের দিকে পরিব্রাজন করে।

সমগ্র জার্মানি বা যুক্তরাজ্য টাইর‍্যানোপলিসের অন্তর্গত।


6. ভৌতিক নগর (Necropolis) : নগর বিবর্তনের ধারায় সর্বশেষ পর্যায় হল নেক্রোপলিস বা ভৌতিক নগর; মামফোর্ডের মতে, এই অবস্থায় কোনোও নগর যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের দ্বারা ক্রমশ পরিসেবাহীন হয়ে পড়লে তার অতীতের যাবতীয় ঐতিহ্য হারায়। এই কারণে এটি মুখ গ্রামীণ সমাজের পুনরুত্থান পর্যায় (দাশগুপ্ত, 1983)। ব্যাবিলন, হরপ্পা, মহেন-দো-দারো বা মিশরের গিজা -ধরনের নেক্রোপলিসের অন্তর্গত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url