জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাস | Whittaker পাঁচরাজ্য শ্রেণিবিন্যাস | বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা | Five Kingdom Classification
জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাস | Whittaker পাঁচরাজ্য শ্রেণিবিন্যাস বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা
শ্রেণিবিন্যাসের সংজ্ঞা (Definition of Classification) :
এক বা একাধিক লক্ষণের সাদৃশ্য ও পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুশৃঙ্খলভাবে একটি নির্দিষ্ট রীতি অনুযায়ী জীবের গোষ্ঠীভুক্তি তথা বিন্যাসকরণের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে।
শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা (Needs for Classification):
শ্রেণিবিন্যাস জীববিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল -
(i) সাধারণ জ্ঞানলাভ ঃ সমস্ত জীবজগৎকে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ট্যাক্সনে অন্তর্ভুক্ত করাই হল শ্রেণিন্যিাসের মুখ্য উদ্দেশ্য। অসংখ্য বইকে পাঠাগারে যেমন কতগুলি নিয়মের ভিত্তিতে ( Dewey decimal ) পৃথক পৃথক ভাগে সাজানো হয় এক্ষেত্রেও জীবজগৎকে বিভিন্ন ট্যাক্সনে ভাগ করা হয়। শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে বিভিন্ন জীবের বৈশিষ্ট্য, বাসস্থান প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা লাভ করা যায়।
(ii) শনাক্তকরণ ঃ শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হলে কোনো জীবকে শনাক্ত (Identification) করা সম্ভব নয়। প্রতিটি জীবকেই শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।
(iii) পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় ঃ শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন জীবের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারি এবং বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পারি।
পাঁচরাজ্য শ্রেণিবিন্যাস (Five Kingdom Classification) Whittaker এর পাঁচ রাজ্য হল —
I. মনেরা (Monera)
II. প্রোটিস্টা (Protista)
III. ছত্রাক বা ফানজি(Fungi)
IV. প্লানটি (Plantae)
V. অ্যানিম্যালিয়া (Animalia)
A. রাজ্য মনেরা (Monera - Kingdom of Prokaryotes) :
এই রাজ্যের মধ্যে সমস্ত প্রোক্যারিয়ট (Prokaryotes), যেমন—মাইকোপ্লাজমা (Mycoplasma), ব্যাকটেরিয়া (Bacteria), অ্যাকটিনোমাইসিটিস (Actinomycitis) এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া (Cyanobacteria) বা নীলাভ সবুজ শৈবাল (Blue green algae) অন্তর্ভুক্ত।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
(i) মনেরা মূলত এককোশী এবং প্রোক্যারিওটিক।
(ii) এদের পুষ্টির বৈচিত্র্যতা লক্ষণীয়, যেমন—স্যাপ্রোবিক (Saprobic), প্যারাসাইটিক (Parasitic), কেমো অটোট্রপিক (Chemo autotrophic), ফটোট্রপিক (Phototrophic) এবং সিমবায়োটিক (Symbiotic)।
(iii) কোশ আণুবীক্ষণিক (0.1´ থেকে কয়েক মাইক্রন দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট)।
(iv) কোশপ্রাচীর উপস্থিত, যা মূলত পেপটাইডোগ্লাইক্যান এবং পলিস্যাকারাইড দিয়ে গঠিত।
(v) কোশের একটি মাত্র আবরণী থাকে—প্লাজমা পর্দা।
(vi) সুগঠিত নিউক্লিয়াস গঠিত হয়নি।
(vii) DNA আবরণীবিহীন, কোশের সাইটোপ্লাজমে কুণ্ডলীকৃতভাবে অবস্থান করে। এরকম DNA-কে নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বলে।
(viii) পর্দাবেষ্টিত কোনো কোশ অঙ্গাণু থাকে না।
(ix) ফ্ল্যাজেলা থাকলে তা সিঙ্গল স্ট্র্যান্ডেড (Single Stranded) হয় এবং ফ্ল্যাজেলিন (Flagelin) প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
(x) কোশ বিভাজনকালে বেম গঠিত হয় না।
(xi) গ্যামেট সৃষ্টি হয় না। অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় জনন ঘটে।
B. রাজ্য প্রাটিস্টা (Protista - Kingdom of Unicellular Eukaryotes)
এই রাজ্যের অন্তর্গত জীবগুলি হল—ফ্ল্যাজেলেটস (flagellates), ডায়াটম, ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস (dinoflagellates), স্লাইম মোল্ড (Slime moulds), সারকোডিনস ( Sarcodines), সিলিয়েটস (Cilliates), স্পোরোজোয়ানস (sporozoans) ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
(i) সব রকমের এককোশী এবং উপনিবেশ গঠনকারী ইউক্যারিয়ট এই রাজ্যের অন্তর্গত।
(ii) বেশিরভাগই জলজ এবং প্ল্যাংকটন (Plankton) গঠন করে।
(iii) এদের পুষ্টি প্রক্রিয়া — ফটোসিন্থেটিক, স্যাপ্রোবিক, প্যারাসাইটিক, হলোজোইক প্রভৃতি।
(iv) সালোকসংশ্লেষীয় প্ল্যাংকটনদের ফাইটোপ্ল্যাংকটন (Phytoplankton) বলে। হলোজোইক প্ল্যাংকটনদের জুপ্ল্যাংকটন (zooplankton) বলে। হলোজোইক পুষ্টিসম্পন্নকারী প্রোটিস্টাদের প্রোটোজোয়া (Protozoa) বলে। এদের অ্যানিমালিয়া থেকে
পৃথক করা হয়েছে।
(v) ইউগ্লিনা (Euglena) নামক এককোশী প্রাণীদের হলোজোইক এবং হলোফাইটিক উভয় প্রকার পুষ্টি লক্ষণীয়।
(vi) জেনেটিক পদার্থ সংগঠিত হয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করেছে। DNA তে হিস্টোন প্রোটিন থাকে।
(vii) পর্দা ঘেরা কোশ অঙ্গাণু উপস্থিত।
(viii) ফ্ল্যাজেলা উপস্থিত থাকলে তা II স্ট্র্যান্ডেড হয়।
(ix) মাইক্রোটিউবিউল টিউবিউলিন (tubulin) প্রোটিন নির্মিত।
(x) এদের অযৌন ও যৌন উভয় প্রকার জনন দেখা যায়।
C. রাজ্য ছত্রাক বা ফানজি (Fungi — Multicellulars Decomposer) :
এই রাজ্যের অন্তর্গত ছত্রাকগুলি হল—ইস্ট, মিউকর, পেনিসিলিয়াম, অ্যাগারিকাস, পাকসিনিয়া ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
(i) এই রাজ্যের অন্তর্গত জীব ক্লোরোফিলবিহীন, রেণু উৎপাদনকারী, বহুকোশী ও বহু নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট ও ইউক্যারিওটিক।
(ii) এদের পুষ্টি পরভোজীয় প্রকৃতির—পরজীবী, মৃতজীবী এবং মিথোজীবী প্রকৃতির।
(iii) ছত্রাকদের অণুসূত্রাকার দেহকে মাইসেলিয়াম (mycelium) বলে। (iv) মাইসেলিয়ামের অন্তর্গত অণুসূত্রগুলিকে হাইফি
(hyphae) বলে।
(v) হাইফিগুলি বহুকোশী এবং বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত।
(vi) কোশপ্রাচীর কাইটিন (Chitin) নির্মিত।
(vii) কোশের প্রোটোপ্লাজম দুটি আবরক দিয়ে আবৃত থাকে।
(viii) জনন—অযৌন ও যৌন প্রকৃতির।
(ix) কলা গঠিত হয়নি।
(x) সঞ্চিত খাদ্যবস্তু হল গ্লাইকোজেন এবং ফ্যাট।
D. রাজ্য প্লানটি (Plantae - Kingdom of Multicellular Producer) :
এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হল বহুকোশী, সালোকসংশ্লেষীয় ইউক্যারিওটিক উদ্ভিদ, যেমন—শৈবাল, মস, ফার্ন ইত্যাদি উদ্ভিদ।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
(i) বহুকোশী জীব।
(ii) এরা সকলেই ইউক্যারিওটিক।
(iii) অনির্ধারিত বৃদ্ধিসম্পন্ন।
(iv) দেহের গঠন অনিয়মিত।
(v) অঙ্গ সাধারণত বাহ্যিক।
(vi) স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্ন।
(vii) কোশে প্লাস্টিড উপস্থিত।
(viii) খাদ্য সংশ্লেষে সক্ষম হওয়ায় এরা উৎপাদক (Producers)।
(ix) উদ্ভিদ স্থলজ, জলজ বা সমুদ্রের কিনারায় বসবাসকারী।
(x) এদের কলা গঠিত হয়েছে।
(xi) সঞ্চিত খাদ্য শ্বেতসার এবং ফ্যাট।
(xii) জনন অযৌন এবং যৌন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
E. রাজ্য অ্যানিম্যালিয়া (Animalia-Kingdom of Multicellulur Consumers) :
এই রাজ্যের প্রাণীরা মেটাজোয়া (metazoa) বা বহুকোশী (multicellulur) প্রাণী। প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী ব্যতীত সমস্ত প্রাণীরা এই রাজ্যের অন্তর্গত। স্পঞ্জ, একনালিদেহী প্রাণী, কৃমি জাতীয় প্রাণী, অঙ্গুরীমাল, সন্ধিপদ, কম্বোজ (Molluscus), একাইনোডার্ম (Echinoderm), মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী ইত্যাদি প্রাণীরা অ্যানিম্যালিয়া রাজ্যের অন্তর্গত।
বৈশিষ্ট্য (Characteristics) :
(i) বহুকোশী ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির।
(ii) দেহ নিয়তাকার গঠনবিশিষ্ট।
(iii) অঙ্গাণু অভ্যন্তরীণ।
(iv) বৃদ্ধি নির্ধারিত।
(v) কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র গঠিত হয়েছে।
(vi) উদ্দীপনায় দ্রুত সাড়া দেয়।
(vii) কোশে কেন্দ্রীয় বড়ো ভ্যাকুওল থাকে না। পরিবর্তে ছোটো একাধিক ভ্যাকুওল থাকে।
(viii) কোশে সেন্ট্রিওল থাকে।
(ix) কোশে কোশ প্রাচীর থাকে না।
(x) প্লাসটিড থাকে না।
(xi) হলোজোইক পুষ্টি সম্পন্ন হয়।
(xii) জনন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন প্রকৃতির।
(xiv) এরা খাদক প্রকৃতির।