অষ্টম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান 6 অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | অষ্টম শ্রেণীর পরিবেশ ও বিজ্ঞান জীবদেহের গঠন pdf | Class 8 Poribesh o Bigyan Chapter 6
কোশ – CELL
কোশ কাকে বলে?
উত্তর: সজীব আবরণী বেষ্টিত, প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত স্বপ্রজননশীল জীবদেহের গঠনমূলক ও জৈবনিক ক্রিয়ামূলক একককে কোশ বলে।
■ জীবদের গঠনগত ও কার্যগত ক্ষুদ্রতম একক হল কোশ।
1665 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী রবার্ট হুক ওক গাছের কাণ্ডের ছাল নিয়ে তার একটি সূক্ষ্ম প্রস্থচ্ছেদ তৈরি করেন। তারপর নিজের তৈরি মাইক্রোস্কোপের নীচে ওই প্রস্থচ্ছেদ দেখার সময় মৌচাকের প্রকোষ্ঠের মতো অসংখ্য কুঠুরি লক্ষ করেন। তিনি এদের Cellulae (ল্যাটিন অর্থ ঘর) বলে আখ্যা দেন। পরে এদেরই তিনি Cell (কোশ) নাম দেন ৷
বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (1965) প্রথম কোশ আবিষ্কার করেন।
বিজ্ঞানী এন্টনি ভ্যান লিউয়েনহক (1674) প্রথম সজীব কোশ আবিষ্কার করেন।
রবার্ট হুকের পর্যবেক্ষণ করা কোশগুলি ছিল মৃত।
1831 খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) নিউক্লিয়াসের নামকরণ করেন।
1839 খ্রিস্টাব্দে পারকিনজি (J.E. Parkinje) প্রোটোপ্লাজমের নামকরণ করেন।
1674 খ্রিস্টাব্দে ডাচ্ বিজ্ঞানী এন্টনি ভ্যান লিউয়েনহক (Leeuwenhoek) প্রচলিত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি ঘটিয়ে প্রথম সজীব কোশ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ ও প্রাণী; মানুষের RBC (লোহিত রক্তকণিকা) ও জীবাণু পর্যবেক্ষণ করেন।
খাদ্য হজম করার জন্য পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র।
শ্বাসবায়ু নেওয়া ও ছাড়ার জন্য ফুসফুস।
রক্তকে দেহের দূরতম প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হৃৎপিণ্ড।
দেহের বর্জ্যকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার জন্য বৃক্ক।
উদ্দীপনা গ্রহণ ও তাকে উত্তেজনায় রূপান্তরের জন্য মস্তিষ্ক।
অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ কী?
উত্তর: যে যন্ত্র ব্যবহারের দ্বারা খালি চোখে দেখা যায় না এমন ছোটো ছোটো বস্তু, মূলত কোশ ও কোশীয় বস্তুর স্পষ্ট ও বিবর্ধিত রূপ দেখা যায়, তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ বলে ।
■ ফ্রান্সিস জ্যানসেন ও জাচারিয়া জ্যানসেন 1590 খ্রিস্টাব্দে প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।
■ গ্যালিলিয়ো গ্যালিলি (Galileo Galilei) 1610 খ্রিস্টাব্দে বিশেষ ধরনের (একটি চোঙের মধ্যে দুটি কাঁচের লেন্স বসিয়ে) অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
■ রবার্ট হুক (1665) খ্রিস্টাব্দে অপেক্ষাকৃত উন্নত অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।
■ লিউয়েনহক 1674 খ্রিস্টাব্দে আরও উন্নত অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।
■ নল ও রুস্কা 1930 খ্রিস্টাব্দে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
■ সরল আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে অবতলাকার।
■ যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সমাবতলাকার দর্পণ ব্যবহার করা হয়।
প্রকারভেদ : অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রধানত দুই প্রকারের, যথা—1. আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও 2. ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
1. আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Light microscope) :
সংজ্ঞা : যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান আলোক রশ্মির (সূর্যালোক বা বৈদ্যুতিক আলো) সাহায্যে বস্তুকে আলোকিত করা এবং একটি বা দুটি লেন্সের মাধ্যমে বস্তুর বিবর্ধিত রূপ পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাকে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
প্রকারভেদ: আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র দু-রকমের, যথা— সরল আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ও যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র ।
A. সরল আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র : যে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে একটি মাত্র লেন্স থাকে এবং বিবর্ধন ক্ষমতা সীমিত (কম) হয়, তাকে সরল আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে। এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বস্তু বা নমুনাকে 10 থেকে 20 গুণ বড়ো দেখা যায় ৷
সরল আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়?
পাতার শিরাবিন্যাস, ফুলের ব্যবচ্ছেদ, পতঙ্গের উপাঙ্গ প্রভৃতি স্থূল গঠনগুলি এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
B. যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র : যে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দুটি ভিন্ন লেন্স (অকিউলার ও অবজেকটিভ লেন্স) যুগ্মভাবে বস্তু বা নমুনার অধিক বিবর্ধিত করে, তাকে যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
যৌগিক আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়?
• এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বস্তু বা নমুনাকে 2000 থেকে 4000 গুণ বড়ো দেখা যায় ।
• ব্যাকটেরিয়া শৈবাল ছত্রাক বিভিন্ন এককোশী ও বহুকোশী প্রাণীর দেহের গঠন জানার জন্য ব্যবহার করা হয়।
• ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, ছত্রাক প্রভৃতির বহির্গঠন;
• মূল, কাণ্ড ও পাতার অন্তর্গঠন; প্রাণীর কলাস্থান গঠন;
• রক্তের বিভিন্ন কোশীয় উপাদান;
• ক্রোমোজোমের বিভিন্ন গঠন ও কোশীয় অঙ্গাণুর গঠন এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
2. ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র:
সংজ্ঞা : যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত গতির ইলেকট্রন প্রেরণ করে নমুনা বস্তুর অধিক বিবর্ধিত দৃশ্য ফ্লুরোসেন্ট পর্দায় বা ফটোতে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাকে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
প্রকারভেদ: ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দুই ধরনের হয়, যথা— ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র এবং স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ।
• ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কোনো নমুনাকে 50,000 থেকে 3,00,000 গুণ বড়ো দেখা যায়।
• ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে কাঁচের লেন্সের পরিবর্তে তড়িৎচুম্বক ব্যবহার করা হয় ।
• বস্তুকে দেখানোর জন্য ফটোগ্রাফিক ফিল্ম ব্যবহার করা হয় ।
ট্রান্সমিশন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে নমুনা বস্তুর বিবর্ধিত প্রতিচ্ছবি নীচে থাকা ফ্লুরোসেন্ট পর্দায় দেখা যায়
স্ক্যানিং ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে নমুনা বস্তুর উপরিতলের ত্রিমাত্রিক দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখা যায়।
স্টেন (Stain) : কলা সংগঠনকে ভালোভাবে দেখার জন্য নানান রঙের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে রঞ্জিত করা হয়, এদের স্টেন বলে ।
যেমন–মিথিলিন ব্লু, স্যাফ্রানিন, ক্রিস্টাল ভায়োলেট, ইওসিন, বিসমার্ক ব্রাউন, ইউরানি অ্যাসিটেট, লেড সাইট্রেট ইত্যাদি
কোশের বৈচিত্র্য (Variation of cell)
জীবদেহ এক বা একাধিক কোশ দ্বারা গঠিত হতে পারে, অর্থাৎ জীবদেহ এককোশী (Unicellular) বা বহুকোশী (Multicellular) হতে পারে।
যখন কোনো জীবের দেহ একটিমাত্র কোশ দিয়ে গঠিত হয়, তখন তাকে এককোশী জীব বলে।
এককোশী জীবদের দেহ একটিই মাত্র কোশ দ্বারা গঠিত। যেমন— রাইজোবিয়াম, ভিব্রিও কলেরি (ব্যাকটেরিয়া); নস্টক, অ্যানাবিনা
(নীলাভ-সবুজ শৈবাল); মাইকোপ্লাজমা (ব্যাকটেরিয়া সদৃশ জীব); ক্ল্যামাইডোমোনাস (শৈবাল); ইস্ট (ছত্রাক); অ্যামিবা, প্যারামিসিয়াম, ইউগ্লিনা, প্লাসমোডিয়াম (প্রাণী) ইত্যাদি।
জীবদেহ যখন একাধিক কোশ দিয়ে গঠিত হয়, তখন তাকে বহুকোশী জীব বলে।
বহুকোশী: বেশিরভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহই একাধিক কোশ দ্বারা গঠিত। যেমন— স্পাইরোগাইরা, কারা (শৈবাল); অ্যাগারিকাস (ছত্রাক); মস, ফার্ন, পাইন, বট, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি। উদ্ভিদ এবং স্পঞ্জ, হাইড্রা, কেঁচো, কৃমি,আরশোলা, শামুক, মাছ, ব্যাঙ, সাপ, পাখি, বিড়াল, কুকুর, হাতি, বাঁদর, বাঘ, মানুষ ইত্যাদি প্রাণী। জীবদেহের আকৃতি যত বড়ো হয় তার দেহে কোশের সংখ্যা তত বেশি হয়।
ভাইরাসদের দেহে কোনো কোশীয় বৈশিষ্ট্য না থাকায় এদের অকোশীয় (Acellular) বলা হয় ৷
একজন 80 kg ওজন বিশিষ্ট পুরুষ মানুষের দেহের কোশের সংখ্যা আনুমানিক ছয় লক্ষ কোটি থেকে দশ লক্ষ কোটি।
কোশের আকার (Shape of cell)
এককোশী জীব থেকে শুরু করে বহুকোশী জীবদের বিভিন্ন আকৃতির হয়। জীব বিশেষে কোশের আকারও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এমনকি একই জীবদেহে বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন আকৃতির কোশ দেখা যায় ৷ উদাহরণস্বরূপ : –____
■ গোলাকার কোশ : কক্কাস (ব্যাকটেরিয়া), শ্বেত রক্তকণিকা, প্রস্তর কোশ (মটর, মুগ ইত্যাদির বীজত্বকে; পেয়ারা, ন্যাসপাতির ফলের শাঁসে থাকে)।
■ ডিম্বাকার কোশ : ডায়াটম (শৈবাল); রক্ষীকোশ (পত্ররন্ধ্রে থাকে); পাখির ডিম ।
■ স্তম্ভাকার কোশ : দংশক রোম (বিছুটি গাছের পাতা ও কাণ্ডের ত্বকে থাকে); ব্যাসিলাস (ব্যাকটেরিয়া), স্পঞ্জের কোয়ানোসাইট কোশ।
■ সূত্রাকার কোশ : তন্তুকোশ, তুলোর রোম।
■ বহুভুজাকার কোশ: হারপিস ভাইরাস, কোলেনকাইমা ও স্কেরেনকাইমা কলার কোশ ।
■ মাকু-আকৃতির : পেশি কোশ ।
■ আয়তাকার কোশ : স্পাইরোগাইরা নামক শৈবালের কোশ ।
■ দণ্ডাকার : চোখের রেটিনার রড কোশ, টোবাকো মোজাইক ভাইরাস।
■ অনিয়তকার: অ্যামিবা,শ্বেত রক্তকণিকা
অ্যামিবার আকৃতি অ্নিয়মিত। সর্বদা এর আকৃতি পরিবর্তিত হয়।
শ্বেত রক্তকণিকা মানুষের রক্তের জীবনকে মেরে ফেলার জন্য থাকে।, এরা আকৃতি সর্বদা অ্যামিবার মতো পরিবর্তিত হয়।
অ্যামিবা একটি স্বাধীন জীব। শ্বেত রক্তকণিকা একটি জীবদের কোশী।
মানবদেহের বিশেষ কয়েকটি কোশের আকার
রক্তকোশ (Blood cell) :
(a) লোহিত রক্তকণিকা বা এরিথ্রোসাইট : দেখতে গোলাকার ও দ্বি-অবতল। পরিণত লোহিত রক্তকণিকা নিউক্লিয়াসবিহীন। ধাত্রে হিমোগ্লোবিন নামক শ্বাসবায়ু পরিবহণকারী রঞ্জক থাকে। বিভিন্ন ব্যাসের রক্তনালির মধ্য দিয়ে যাতায়াতের জন্য এবং অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহণের জন্য এরূপ আকারের হয়।
■ কাজ : শ্বাসবায়ু (O, ও CO,) পরিবহণ করা, রক্তের অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের সমতা রক্ষা করা, রক্তের সান্দ্রতা বজায় রাখা ।
(b) শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট : দেখতে অনিয়তাকার অর্থাৎ নির্দিষ্ট আকৃতিবিহীন। সাইটোপ্লাজমে গোলাকার, বৃক্কাকার বা বহুলতিযুক্ত নিউক্লিয়াস থাকে।
■ কাজ : মনোসাইট ও নিউট্রোফিল শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে, লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে রোগাক্রমণ প্রতিরোধ করে। বেসোফিল শ্বেতকণিকা রক্তে হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তবাহে রক্ততঞ্চন রোধ করে, ইওসিনোফিল শ্বেতকণিকা হিস্টামিন নিঃসরণ করে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।
(c) অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট: দেখতে ডিম্বাকার বা বেম আকৃতির। নিউক্লিয়াসবিহীন।
■ কাজ : রক্তক্ষরণের সময় থ্রম্বোপ্লাস্টিন নিঃসরণ করে রক্ত তঞ্চনে সাহায্য করে, ক্ষতিগ্রস্ত রক্তজালিকার মেরামতিতে সাহায্য করে।
পেশিকোশ : দেখতে মাকু আকৃতির বা চোঙাকৃতির। অস্থি বা ঐচ্ছিক পেশিতে অসংখ্য, অনৈচ্ছিক পেশি ও হুপেশিতে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। কাজ : অস্থি বা ঐচ্ছিক পেশি প্রাণীদের চলন ও গমনে সহায়তা করে; অনৈচ্ছিক বা মসৃণ পেশি দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহের সংকোচন ঘটিয়ে খাদ্যনালির মধ্য দিয়ে খাদ্যের স্থানান্তরণ, শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে বায়ু পরিবহণ, রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্তের সংবহন ইত্যাদি কার্য সম্পন্ন করে; হৃদপেশি তালে ও ছন্দে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে দেহে রক্ত সংবহন ঘটায়।
স্নায়ুকোশ (Neurone) : প্রধান দুটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা— কোশদেহ এবং প্রবর্ধক। কোশদেহ দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার বা নক্ষত্রাকার। প্রবর্ধক দু-প্রকারের হয়, যথা—লম্বা, সাধারণত শাখা-প্রশাখা বিহীন অ্যাক্সন এবং ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখাযুক্ত ডেনড্রন।
কাজ : প্রাণীদেহে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করে উদ্দীপনায় সাড়া দেয়, বিভিন্ন যন্ত্র ও তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, পেশির সংকোচন ও গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্ভিদদেহে স্নায়ুকোশ থাকে না
কোশ পরিমাপের একক
কোশের পরিমাপের জন্য যেসব এককগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি হল যথাক্রমে — মাইক্রন (Micron, ), মিলিমাইক্রন এবং অ্যাংস্ট্রম (Angstrom, Å)। বর্তমানে মাইক্রনকে মাইক্রোমিটার (m) এবং মিলিমাইক্রনকে ন্যানোমিটার (nm) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
1 মাইক্রোমিটার (m) = 0.001 মিমি বা 1 মিটারের 10 লক্ষ ভাগের 1 ভাগ ।
1 ন্যানোমিটার (nm) == 0.001 um বা 0.000001 মিমি।
1 অ্যাংস্ট্রম (Å) = 0.1 nm ন্যানোমিটার ।
1 মিটার = 1000 মিলিমিটার।
1 মিলিমিটার = 1000 মাইক্রোমিটার।
1 মাইক্রোমিটার = 1000 ন্যানোমিটার ।
1 ন্যানোমিটার = 10 অ্যাংস্ট্রম।
কোশের আয়তন (Size of cell)
আণুবীক্ষণিক কোশ :
জীবজগতের সবচেয়ে ছোটো কোশ : মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকাম এবং মাইক্রোপ্লাজমা লেডলাই (ব্যাস 0-1um)।
মানবদেহের সবচেয়ে ছোটো কোশ : লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকা (ব্যাস 7.5um ) ।
■ খালি চোখে দৃশ্যমান কোশ :
সবচেয়ে বড়ো এককোশী উদ্ভিদ কোশ : অ্যাসিটাবুলেরিয়া নামক শৈবাল। দৈর্ঘ্য 5-10 cm |
সবচেয়ে বড়ো এককোশী প্রাণীকোশ : উটপাখির ডিম। দৈর্ঘ্যে প্রায় 170 mm এবং প্রস্থে 125 mm /
বহুকোশী উদ্ভিদের সবচেয়ে বড়ো একটি কোশ : র্যামী নামক উদ্ভিদের বাকলের একটি তত্ত্ব। দৈর্ঘ্য প্রায় 55 cm |
মানবদেহের সবচেয়ে বড়ো কোশ : স্নায়ুকোশ। দৈর্ঘ্য প্রায় 1 মিটার।
সবচেয়ে বড়ো উদ্ভিদ : ইউক্যালিপটাস। উচ্চতা প্রায় 114 মিটার।
সবচেয়ে বড়ো প্রাণী : নীল তিমি। উচ্চতা প্রায় 33 মিটার।
সবচেয়ে লম্বা প্রাণী : রিবন ওয়ার্ম। দৈর্ঘ্য প্রায় 54 মিটার।
পাখির ডিম আসলে একটি কোশ। এই কোশ আমরা খালি চোখে দেখতে পাই।
উদ্ভিদ কলা (Plant tissue)
কলা : উৎপত্তি ও কার্যগতভাবে এক এরূপ সম বা বিষম আকৃতির কোশ-সমষ্টিকে কলা বলে।
অঙ্গ বা যন্ত্র : বিভিন্ন কলা মিলিতভাবে যখন একটি নির্দিষ্ট কাজ করে, তখন তাকে অঙ্গ বা যন্ত্র বলে। ত্বক আমাদের বৃহত্তম অঙ্গ ।
তন্ত্র : যখন কতকগুলি অঙ্গ বা যন্ত্র মিলিত হয়ে নির্দিষ্ট কার্য সম্পন্ন করে, তখন ওই যন্ত্র বা অঙ্গের সমষ্টিকে তন্ত্র বলে।
উদ্ভিদ কলা কাকে বলে?
উদ্ভিদ দেহে উৎপত্তিগতভাবে এক সম বা বিষম আকৃতির কোষ সমষ্টি মিলিতভাবে একটি নির্দিষ্ট কাজ করলে তাদের একত্রে উদ্ভিদ কলা বলে।
উদ্ভিদ কলা প্রধানত দু-ভাগে বিভক্ত, যথা—ভাজক কলা ও স্থায়ী কলা।
A. ভাজক কলা : এই কলার কোশগুলি সজীব (অর্থাৎ সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াসযুক্ত)। দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকার বা বহু বহুভুজাকার। এই কলার কোশগুলি প্রধানত মূল, কাণ্ড ও পাতায় থাকে এবং ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায়।
B. স্থায়ী কলা : এই কলার কোশগুলি ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন হয় এবং কোশগুলি বিভাজনে অক্ষম। স্থায়ী কলা দু-ভাগে বিভক্ত, যথা—সরল স্থায়ী কলা ও জটিল স্থায়ী কলা।
সরল স্থায়ী কলা : তিনপ্রকারের হয়, যথা-
প্যারেনকাইমা : এই কলার কোশগুলি সজীব এবং দেখতে প্রধানত গোলাকার বা ডিম্বাকার। এই কলার কোশে ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক থাকে।
কোলেনকাইমা : এই কলার কোশগুলিও সজীব এবং দেখতে গোলাকার বা ডিম্বাকার। এই কলার কোশে কখনও কখনও ক্লোরোফিল থাকে।
স্ক্লেরেনকাইমা : এই কলার কোশগুলি মৃত। কোশগুলি সাধারণত বহুভুজাকার।
■ সরল স্থায়ী কলা কাজ: (i) খাদ্য সংশ্লেষ করা। (ii) খাদ্য ও বর্জ্য পদার্থ সঞ্জয় করা। (iii) জলজ উদ্ভিদের প্লবতা প্রদান করা। (iv) পরিবহণে সহায়তা করে। (v) দৃঢ়তা প্রদান করে। (vi) উদ্ভিদ অঙ্গের চাপ ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। (vi) ফল ও বীজের বিস্তারে সাহায্য করে।
জটিল স্থায়ী কলা : এই কলা দু-ভাগে বিভক্ত, যথা—জাইলেম ও ফ্লোয়েম।
জাইলেম: জাইলেম চার প্রকার কোশ উপাদান নিয়ে গঠিত, যথা—
(i) ট্রাকিড : দেখতে লম্বা এবং দুপ্রান্ত সরু। কোশগুলি মৃত। (ii) ট্রাকিয়া : দেখতে নলাকার এবং মৃত।
(iii) জাইলেম প্যারেনকাইমা : দেখতে লম্বাটে এবং সজীব। (iv) জাইলেম তত্ত্ব : লম্বা এবং দুপ্রান্ত সূচালো। কোশগুলি সজীব।
■ কাজ : জাইলেমের মাধ্যমে মূলরোম দ্বারা শোষিত জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ পাতায় পৌঁছায়; অর্থাৎ এই কলার কোশগুলি ঊর্ধ্বমুখী সংবহনে সাহায্য করে ৷
ফ্লোয়েম : ফ্লোয়েম চার প্রকার কোশ উপাদান নিয়ে গঠিত, যথা—(i) সিভনল: কোশগুলি দেখতে লম্বা ও নলাকার। কোশগুলি সজীব কিন্তু নিউক্লিয়াস থাকে না ।
(ii) সঙ্গীকোশ: কোশগুলি দেখতে লেন্সের মতো। কোশগুলি সজীব।
(iii) ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ঃ কোশগুলি আকৃতিতে লম্বা ও সরু। সজীব। (iv) ফ্লোয়েম তন্তু : লম্বা,সূচালো। কোশগুলি মৃত।
■ কাজ : ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পাতায় উৎপন্ন খাদ্য-রস নিম্নমুখে বা পার্শ্বমুখে পরিবাহিত হয় ৷
ভাজক কলা কাকে বলে? কোথায় দেখতে পাওয়া যায়? অবস্থান, দেখতে কেমন? আকৃতি এবং কাজ আলোচনা কর৷
সংজ্ঞা : উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে উপস্থিত যে অপরিণত কলার কোশগুলি প্রতিনিয়ত বিভাজিত হতে পারে, তাদের ভাজক কলা বলে।
অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চলে (মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগ, কাণ্ডের পর্বমধ্য, শীর্ষমুকুল) এই কলা দেখতে পাওয়া যায়।
আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে )
(i) ভাজক কলার কোশগুলি আকৃতিতে সমান ব্যাসযুক্ত এবং আয়তনে খুবই ছোটো।
(ii) খুব পাতলা প্রাথমিক কোশপ্রাচীর বর্তমান,গৌণ কোশপ্রাচীর নেই।
(iii) কোশগুলি ঘনসন্নিবিষ্টভাবে অবস্থান করে, তাই কোশান্তর রন্ধ্র থাকে না।
(iv) কোশগুলি অপরিণত, অর্থাৎ এদের বিভেদন সম্পূর্ণরূপে ঘটে না।
(v) এই কলার কোশগুলো বিভাজিত হতে পারে ।
(vi) কোশে ছোটো ছোটো গহ্বর দেখা যায়, যাদের প্রো-ভ্যাকুওল বলে। অনেক ক্ষেত্রে গহ্বর নাও থাকতে পারে।
(viii) শ্বসনহার খুব বেশি বলে সঞ্চিত খাদ্য থাকে না বললেই চলে।
(ix) কোশগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট অর্থাৎ পাশাপাশি দুটো কোশের মাঝে কোনো ফাঁক থাকে না ৷
ভাজক কলার কাজ:
(i) ভাজক কলার কোশগুলো সবসময় বিভাজিত হয়ে পুরো উদ্ভিদদেহের বৃদ্ধি ঘটায়।
(ii) কাণ্ডের অগ্রভাগে এই কলা নতুন পাতা, মুকুল ও শাখা তৈরি করে। (iii) ভাজক কলার কোশ থেকেই স্থায়ী কলা সৃষ্টি হয়।
(iv) পার্শ্বস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদের প্রস্থের বৃদ্ধি ঘটায় । (v) মূলশীর্ষে মূলরোম সৃষ্টি করে।
স্থায়ী কলা কাকে বলে? কোথায় দেখতে পাওয়া যায়? অবস্থান, দেখতে কেমন? আকৃতি এবং কাজ আলোচনা কর ।
সংজ্ঞা : ভাজক কলা থেকে সৃষ্ট, উদ্ভিদের যে কলার নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিশিষ্ট কোশগুলি অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বিভাজনে অক্ষম,পরিণত ও নির্দিষ্ট কার্যক্ষমতাযুক্ত, তাকে স্থায়ী কলা বলে।
অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ? উদ্ভিদদেহের মূল, কাণ্ড ও পাতার বিভিন্ন অংশে স্থায়ী কলা দেখতে পাওয়া যায় ৷
আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে ):
(i) এই কলার কোশগুলো নির্দিষ্ট আকারযুক্ত এবং বিভাজিত হতে পারে না। (ii) কোশগুলো সজীব বা মৃত দুরকমেরই হতে পারে।
(iii) পাশাপাশি দুটো কোশের মাঝে ফাঁক থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
(iv) সজীব কোশগুলি প্রোটোপ্লাজমযুক্ত এবং মৃত কোশগুলি প্রোটোপ্লাজমবিহীন হয়। (v) কোশপ্রাচীর পাতলা অথবা স্থূল হয়।
(vi) কোশগুলিতে নির্দিষ্ট আকারের ভ্যাকুওল থাকে। । (vii) কোশান্তর রন্ধ্র থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
স্থায়ী কলার কাজ:
(i) উদ্ভিদদেহে খাদ্য তৈরি করতে সাহায্য করে। (ii) উদ্ভিদদেহে জল ও খাদ্যের সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
(iii) উদ্ভিদদেহকে দৃঢ়তা প্রদান করে ৷ (iv) জল ও খাদ্যবস্তুর পরিবহণ সাহায্য করে।
(v) বিভিন্ন পদার্থের ক্ষরণ ও রেচন সাহায্য করে।
ভাজক কলা ও স্থায়ী কলার
পার্থক্য
ভাজক কলা
|
স্থায়ী কলা
|
বিভাজনে সক্ষম ৷
|
স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বিভাজনে অক্ষম।
|
মূল, কাণ্ডের বর্ধনশীল অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
|
মূল, কাণ্ডের বহিস্তরে এবং কেন্দ্ৰস্তম্ভে দেখা যায়।
|
কোশের প্রকৃতি অপরিণত ও সজীব।
|
কোশের প্রকৃতি পরিণত ও সজীব বা মৃত ।
|
কোশের নির্দিষ্ট আকার নেই।
|
কোশের নির্দিষ্ট আকার আছে।
|
কোশপ্রাচীর পাতলা
সেলুলোজ-নির্মিত ও অলংকরণহীন।
|
কোশপ্রাচীর পুরু বা
পাতলা ও অলংকরণযুক্ত।
|
কোশান্তর রন্ধ্র নেই ।
|
কোশান্তর রন্ধ্র থাকে, তবে স্ক্লেরেনকাইমাতে নেই ।
|
কোশগহ্বর নেই, থাকলেও অত্যন্ত ছোটো।।
|
কোশগহ্বর বর্তমান।
|
ক্লোরোপ্লাসটিড থাকে না।
|
ক্লোরোপ্লাসটিড থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।
|
উদ্ভিদদেহের বৃদ্ধি ঘটায়। এই কলা নতুন পাতা, মুকুল ও শাখা তৈরি করে। ভাজক কলার কোশ থেকেই স্থায়ী কলা সৃষ্টি হয়।
|
উদ্ভিদদেহে খাদ্য তৈরি,জল ও খাদ্যের সঞ্চয় ,দৃঢ়তা প্রদান ,
জল ও খাদ্যবস্তুর পরিবহণ সাহায্য করে।
|
প্রাণীদের বিভিন্ন কলা (Animal tissue)
গঠন ও কাজের ভিত্তিতে প্রাণী কলাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
1. আবরণী কলা : যেমন—আঁইশাকার বা স্কোয়ামাস, ঘনকাকার বা কিউবয়ডাল, স্তম্ভাকার বা কলানার, রোমশ বা সিলিয়েটেড এবং গ্রন্থিময় বা গ্ল্যান্ডিউলার।
2. যোগ কলা: যেমন—অ্যারিওলার বা তত্ত্বময় কলা, অ্যাডিপোস বা মেদকলা, কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি কলা, অস্থি কলা, রক্ত কলা এবং লিম্ফয়েড কলা ৷
3. পেশি কলা
4. স্নায়ু কলা
আবরণী কলা
• সংজ্ঞা: দেহের বাইরের অংশের আবরণ ও দেহের অভ্যন্তরের অঙ্গগুলির বাইরের চারপাশে ও ভিতরের (গহ্বরের দেয়ালের) আবরণ সৃষ্টিকারী প্রাণীকলাকে আবরণী কলা বলে।
• অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ? প্রাণীদেহে প্রধানত দুটি জায়গায় আবরণী কলা দেখা যায় দেহের বাইরের আবরণে এবং দেহের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন অঙ্গগুলির বাইরের ও ভিতরের আবরণে।
• আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে ):
(i) আবরণী কলার কোশগুলি কোলাজেন তন্তু দ্বারা গঠিত একটি পাতলা ওকোষীয় মৃত পর্দার উপর সারিবদ্ধ হয়ে থাকে একটি পাতলা, অকোশীয়, মৃত পর্দার ওপর সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে।
(ii) কোশগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট অর্থাৎ পাশাপাশি দুটো কোশের মাঝে (iii) কোনো ফাঁক থাকে না ।
(iv) আবরণী কলায় কোশান্তর রন্ধ্র অনুপস্থিত। (v) আবরণী কলায় কোনো রক্তবাহ এবং তন্তু থাকে না।
• আবরণী কলার কাজ :
(i) দেহের বাইরের তলকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।
(ii) দেহের ভিতরকার বিভিন্ন কলা ও অঙ্গগুলিকে সুরক্ষিত রাখে।
(iii) বিভিন্ন গ্রন্থির গঠনে ও ক্ষরণে আবরণী কলা সাহায্য করে।।
(iv) ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রের প্রাচীরে অবস্থিত এই কলার কোশগুলি
(v) পুষ্টি উপাদান বিশোষণ করে।
(vi) শোষণ, ক্ষরণ এবং রেচনেও এই কলা সাহায্য করে।
যোগ কলা :
সংজ্ঞা : ভ্ৰূণজ মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত স্বল্প কোশ, তন্তু ও অধিক ধাত্র সহযোগে গঠিত যে প্রাণীকলা মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অঙ্গতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাকে যোগকলা বলে।
অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
রক্ত, অস্থি বা হাড়, তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, টেনডন – এগুলো সবই হলো বিভিন্ন ধরনের যোগ কলা। রক্ত
দেখতে পাওয়া যায় শিরা, ধমনি ও হৃৎপিণ্ডে। অস্থি বা হাড়, তরুণাস্থি, লিগামেন্ট ও টেনডন আবার দেখতে পাওয়া যায় দেহের অন্তঃকঙ্কালে।
আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে ):
(i) এই ধরনের কলার কোশগুলো ধাত্রের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। ধাত্রের আবার রকমফের আছে। কোনো ক্ষেত্রে তা তরল (যেমন-রক্ত)। (i) ক্ষেত্রবিশেষে তা অর্ধতরল বা জেলির মতো (যেমন- তরুণাস্থি)। আবার কখনও বা তা কঠিন (যেমন- অস্থি)।
(ii) এই কলার কোশগুলো কোনো ভিত্তি পর্দার ওপর সাজানো থাকে না ।
যোগকলা কাজ:
(i) দেহের বিভিন্ন কলা ও অঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে সাহায্য করে।.
(ii) দেহের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গঠনে যোগকলা বিশেষভাবে সাহায্য করে নির্দিষ্ট অঙ্গের আকার আয়তনের তারতম্য নিয়ন্ত্রণ করে।
(iii) দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। (iv) দেহের কাঠামো গঠন করতে ও ভারবহন করতে সাহায্য করে।
(v) দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যোগকলা সাহায্য করে। (vi) অনেকক্ষেত্রে খাদ্যের সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।
পেশি কলা
সংজ্ঞা : ভ্রূণজ মেসোডার্ম থেকে উৎপন্ন, দীর্ঘ, সংকোচন-প্রসারণশীল কোশগুচ্ছ দ্বারা নির্মিত যে প্রাণীকলা চলন, গমন ও অঙ্গ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে পেশিকলা বলা হয়।
অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?
দেহের সকল পেশিতে এই কলা অবস্থিত।
আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে ) :
(i) এই ধরনের কলা লম্বাটে বা নলাকার কিছু কোশ দিয়ে তৈরি, যা পেশিতন্তু নামে পরিচিত।
(ii) পেশিকোশগুলি প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘ্যে অনেক বড়ো, তাই এদের পেশিতন্তু বলা হয় ।
(iii) পেশিতন্তুগুচ্ছে আন্তঃকোশীয় স্থানে কোনো ধাত্র থাকে না । (iv) পেশিগুলিতে স্নায়ুর বিস্তার লক্ষ করা যায় ।
(v) পেশির মধ্যে রক্তসংবহন দেখা যায়, যা পেশিকোশগুলির সক্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
(vi) পেশিতন্তুগুলির বাইরে, তাদের গুচ্ছের চারপাশে ও পেশির বাইরে যোগকলার আবরণ থাকে।
পেশিকলার কাজ:
(i) প্রাণীদেহের পেশি গঠন করা। (ii) প্রাণীদেহের আকৃতি প্রদান করা। (iii) দেহ-অভ্যন্তরীয় কোমল অংশকে রক্ষা করা।
(iv) উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া। (v) অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সঞ্চালন করা। (vi) দৈহিক ভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো।
(vii) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ঘটায় ও গমনে সাহায্য করে। (viii) হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণের দ্বারা দেহের রক্ত সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।
(ix) শ্বাসপেশির সাহায্যে শ্বাসকার্যের নিয়ন্ত্রণ ঘটে। (x) তাপ উৎপাদন করা এই কলার অন্যতম কাজ ৷ (xi) হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে।
পেশিকলার প্রকারভেদ : পেশিকলাকে প্রধান গঠনের ওপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা— অরেখ পেশি বা অস্থিপেশি বা ঐচ্ছিক পেশি, 2 অরেখ পেশি বা আন্তরযন্ত্রীয় পেশি বা মসৃণ পেশি বা অনৈচ্ছিক পেশি এবং ও হৃদপেশি বা অমসৃণ অনৈচ্ছিক পেশি ।
সরেখ পেশি বা অস্থিপেশি বা ঐচ্ছিক পেশি: যেসব পেশি ব্যক্তির ইচ্ছানুসারে সংকুচিত হয়, যা সাধারণত অস্থি-সংলগ্ন অবস্থায় থাকে, তাদের সরেখ পেশি বা অস্থিপেশি বা ঐচ্ছিক পেশি বলে। এই পেশিগুলি অন্তঃকঙ্কালের অস্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে।
অনৈচ্ছিক পেশি/আন্তরযন্ত্রীয় পেশি : ইচ্ছে অনুযায়ী এই পেশি নাড়ানো সম্ভব নয়। (দেহের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে থাকা পেশি)।
হৃদপেশি : একধরনের অনৈচ্ছিক পেশি যা হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করে।
স্নায়ু কলা
সংজ্ঞা : প্রাণীদেহে উপস্থিত যে কলা উদ্দীপনা পরিবহণ করে ও দেহে ভৌত সমন্বায়করূপে কাজ করে, তাকে স্নায়ুকলা বলা হয়।
উৎস: স্নায়ুকলা ভ্রূণজ এক্টোডার্ম থেকে সৃষ্ট। প্রতিটি স্নায়ু এপিনিউরিয়াম নামক আবরণী দ্বারা বেষ্টিত থাকে।
অবস্থান: কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ? মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড আর দেহের বিভিন্ন স্নায়ুতে এই কলা দেখতে পাওয়া যায়
আকৃতি বা বৈশিষ্ট্য (কেমন দেখতে ):
গঠনগত উপাদান : মূলত দু-ধরনের উপাদান নিয়ে স্নায়ুকলা গঠিত হয়–1. স্নায়ুকোশ বা নিউরোন, 2 নিউরোগ্লিয়া।
• স্নায়ু কলা স্নায়ুকোশ বা নিউরোন আর নিউরোগ্লিয়া (সহায়ক কোশ) নিয়ে তৈরি।
• আন্তঃকোশীয় ধাত্র দেখা যায় না।
• সেন্ট্রিওলের অনুপস্থিতির কারণে এরা বিভাজিত হয় না।
• নিউরোন কোশদেহ ও প্রবর্ধক নিয়ে তৈরি।
• প্রবর্ধক আবার দুধরনের হয় – ডেনড্রন ও অ্যাক্সন। ডেনড্রনের শাখাপ্রশাখাগুলিকে ডেনড্রাইট বলা হয়।
স্নায়ুকলার কাজ:
(i) দেহের বাহ্যিক অথবা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনা গ্রহণ করাই স্নায়ুকলার প্রধান কাজ।
(ii) স্নায়ুকলা প্রাণীদেহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে।
(iii) প্রাণীরা স্নায়ুকলার সাহায্যে পরিবর্তিত পরিবেশের সম্বন্ধে সচেতন হয়।
(iv) পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তা মস্তিষ্কে বয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
(v) জীবদেহের বাইরের ও ভেতরের পরিবেশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ।
(vi) পেশির সংকোচন, বিভিন্ন গ্রন্থির ক্ষরণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। (vii) নির্দিষ্ট অঙ্গে বা গ্রন্থিতে পৌঁছে দেয়।
প্রাণীদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া :
পুষ্টিতে সাহায্যে করা : খাদ্য গ্রহণ, খাদ্য পরিপাক, পাচিত খাদ্যের শোষণ, শোষিত খাদ্যের আত্তীকরণ এবং অপাচ্য খাদ্যের বহিস্করণ।
শ্বসনে সাহায্যে করা : শ্বসন বায়ুর আদান-প্রদান, শক্তি উৎপাদন
সংবহন : খাদ্যের সারাংশ ও শ্বাসবায়ুকে দেহের সমস্ত কোশে পৌঁছে দেওয়া এবং কোশে উৎপন্ন দূষিত পদার্থগুলিকে নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছে দেওয়া ।
রেচন : দেহের বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলিকে রেচন পদার্থ দেহ থেকে নির্গত করা।
গমন : খাদ্য অন্বেষণ, আশ্রয় খোঁজা, প্রজনন ইত্যাদি কাজের জন্য স্থানান্তরে গমন করা ।
স্নায়বিক সমন্বয় : পরিবেশ থেকে আগত উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে।
জনন: সন্তানের জন্ম দিয়ে প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা।
উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া :
(i) মূলরোম দ্বারা জল ও খনিজ লবণ শোষণ এবং জাইলেমবাহিকা দিয়ে তা পাতায় পরিবহণ করা। (ii) পরিবেশ থেকে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে সৌরশক্তি ও ক্লোরোফিলের সহায়তায় খাদ্য সংশ্লেষ করা । (iii) উৎপন্ন খাদ্যের পরিবহণ করা ও বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্জয় করা। (iv) ফুল, ফল ও জীব সৃষ্টি করা। (v) সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।
যোগকলা ও আবরণী কলার পার্থক্য
আবরণী কলা
|
যোগকলা
|
উৎস: ভ্ৰূণজ এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্ম।
|
উৎস: ভ্ৰূণজ মেসোডার্ম।
|
উপাদান: ভিত্তিপর্দার ওপর সজ্জিত কোশ।
|
উপাদান: কোশ, ধাত্র,
তন্তু।
|
রক্তবাহ:অনুপস্থিত
|
রক্তবাহ: উপস্থিত
|
অবস্থান: দেহের আবরণী, দেহের
অভ্যন্তরে অবস্থিত ফাঁপা অঙ্গের বাইরের ও ভিতরের প্রাচীরে দেখা যায়।
|
অবস্থান: বিভিন্ন কলার অন্তবর্তী স্থানে, অঙ্গের প্রাচীরে দেখা যায়।
|
কাজ: দেহকে সুরক্ষা প্রদান করে।
|
কাজ: বিভিন্ন কলার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।
|
কোশের প্রকারভেদ
কোশ প্রধানত দু-প্রকারের, যথা—
প্রোক্যারিওটিক কোশ [গ্রিক ভাষায় Pro = আদি; karyon = নিউক্লিয়াস] : যে সকল কোশের নিউক্লিয়াসটি সুগঠিত নয়, অর্থাৎ নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় জালক থাকে না এবং কোশে পর্দাঘেরা কোনো কোশ অঙ্গাণু থাকে না, ক্রোমোজোম গঠিত হয় না, তাদের প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ বলে। উদাহরণঃ ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি।
ইউক্যারিওটিক কোশ [গ্রিক ভাষায় Eu = প্রকৃত বা আদর্শ; karyon = নিউক্লিয়াস] : যে সকল কোশের নিউক্লিয়াসটি সুগঠিত (নিউক্লিয় পর্দা, নিউক্লিওপ্লাজম, নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয় জালক উপস্থিত) এবং পর্দাঘেরা কোশ অঙ্গাণু থাকে, তাদের ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ বলে। উদাহরণ : উন্নত উদ্ভিদকোশ ও প্রাণীকোশ।
আদর্শ কোশ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা:
সাইটোপ্লাজমে পর্দাঘেরা ও পর্দাবিহীন কোশ অঙ্গাণু বর্তমান। এগুলি হল— মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, গলগিবস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম, লাইসোজোম, রাইবোজোম ও সেন্ট্রোজোম।
আদর্শ কোশের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
কোশপর্দা বা প্লাজমামেমব্রেন
সংজ্ঞা : প্রত্যেক সজীব কোশের প্রোটোপ্লাজমকে বেষ্টন করে যে পাতলা, সূক্ষ্ম, স্থিতিস্থাপক, প্রভেদকভেদ্য, লাইপো-প্রোটিন নির্মিত ত্রিস্তরীয় সজীব আবরণী থাকে, তাকে কোশপর্দা বা প্লাজমা পর্দা বলে।
সকল সজীব আদর্শ কোশের বাইরে পাতলা, সূক্ষ্ম ও সজীব আবরণী পর্দা থাকে, একে কোশপর্দা বলে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) কোশপর্দা তিনটি স্তর নিয়ে গঠিত। (ii) একেবারে বাইরের ও ভেতরের অপেক্ষাকৃত পাতলা স্তর দুটি এক অণুস্তর প্রোটিন দ্বারা গঠিত এবং মাঝের অপেক্ষাকৃত পুরু স্তরটি দুই অণুস্তর লিপিড বা ফ্যাট দ্বারা গঠিত। প্রোটিন-লিপিড-প্রোটিন এরূপ ত্রিস্তরীয় আবরণীকে একক পর্দা বলা হয়। (iii) কোশপর্দা প্রোটোপ্লাজমের ওপর সর্বদা সমানভাবে বিস্তৃত থাকে না। মাঝে মাঝে এটি আঙুলের মতো প্রবর্ধক গঠন করে। এই প্রসারিত অংশগুলিকে মাইক্রোভিলাই (microvilli) বলে।
কাজ : (i) কোশের আকৃতি প্রদান করা। (ii) কোশের প্রোটোপ্লাজমকে এবং নিউক্লিয় পর্দা সৃষ্টি করে। (iv) কোশান্তর ব্যাপন ও অভিস্রবণে রক্ষা করে। (iii) মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম সাহায্য করে। (v) পিনোসাইটোসিস এবং ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে যথাক্রমে তরল ও কঠিন খাদ্য গ্রহণ করে।
কোশপ্রাচীর (Cell wall) :
সংজ্ঞা : উদ্ভিদ কোশের কোশপর্দার বাইরে যে পুরু, দৃঢ়, ভেদ্য, স্থিতিস্থাপক, সেলুলোজ নির্মিত প্রাচীর থাকে, তাকে কোশপ্রাচীর বলে। উদ্ভিদের জনন কোশে এবং প্রাণীকোশে কোশপ্রাচীর থাকে না।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) কোশ প্রাচীরের মুখ্য উপাদান হল সেলুলোজ। (ii) 50 থেকে 60টি সেলুলোজ অণু সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত হয়ে মাইক্রোফাইব্রিলগঠন করে। (iii) অনেকগুলি মাইক্রোফাইব্রিল মিলিত হয়ে গঠিত হয় ম্যাক্রোফাইব্রিল। (iv) ম্যাক্রোফাইব্রিল কোশপ্রাচীরের গঠনগত এককরূপে কাজ করে। (v) ম্যাক্রোফাইব্রিলগুলি সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করে এবং ম্যাক্রোফাইব্রিলের মাঝে মাঝে অনেক ফাঁকা স্থান থাকে, যা ধাত্র নামে পরিচিত। (vi) হেমিসেলুলোজ ম্যাক্রোফাইব্রিলগুলির মধ্যে আড়াআড়ি সংযোগ স্থাপন করে।
কাজ : (i) কোশপর্দা ও প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করা। (ii) কোশের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করা ৷ (iii) কোশকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করা। (iv) পাশাপাশি দুটি কোশের মধ্যে জল ও খনিজ পদার্থের চলাচলে সহায়তা করা।
সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) :
সংজ্ঞা : নিউক্লিয়াস ও কোশ-অঙ্গাণু ছাড়া প্রোটোপ্লাজমের বাকি বর্ণহীন, জেলির মতো, অর্ধস্বচ্ছ, দানাদার, জেলির মতো পদার্থকে সাইটোপ্লাজম বলে।
অবস্থিতি : সকল সজীব কোশে নিউক্লিয় পর্দা ও কোশপর্দার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) সাইটোপ্লাজম প্রধানত ধাত্র বা হায়ালোপ্লাজম এবং ধাত্রে ভাসমান অঙ্গাণু এবং নির্জীব বস্তু নিয়ে গঠিত। (ii) ধাত্রটি সমসত্ত্ব ও কোলয়েড জাতীয় জেলির মতো। (iii) এটি কোশের পরিধির দিকে স্বচ্ছ, দানাবিহীন এক্টোপ্লাজম এবং কেন্দ্রের দিকে ঘন, অস্বচ্ছ, দানাদার এন্ডোপ্লাজম স্তরে বিভেদিত। (iv) সাইটোপ্লাজমে প্রায় 75% জল ও 25% কঠিন পদার্থ থাকে।
কাজ : (i) নিউক্লিয়াস, কোশ-অঙ্গাণু ও নির্জীব বস্তুর ধাত্ররূপে কাজ করে। (ii) বিভিন্ন জৈব রাসায়নিকবিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
(iii) কোশের বৃদ্ধি ও কোশ বিভাজনে সাহায্য করে।
নিউক্লিয়াস (Nucleus) :
সংজ্ঞা: আদর্শ কোশের দ্বি-একক পর্দাবেষ্টিত যে ঘন গোলাকারপ্রোটোপ্লাজমীয় অংশ জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য ধারণ ও বহন করে এবং কোশের জৈব-রাসায়নিক কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে নিউক্লিয়াস বলে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : একটি আদর্শ নিউক্লিয়াস চারটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা-
(a) নিউক্লিয় পর্দা : নিউক্লিয়াসটি যে পর্দা দিয়ে বেষ্টিত থাকে, তাকে নিউক্লিয় পর্দা বলে। এটি দুটি একক পর্দা দিয়ে গঠিত। এই পর্দার গায়ে অবস্থিত ছিদ্রগুলিকে নিউক্লিয় রন্ধ্র বলে। নিউক্লিয়াসের বহিঃপর্দায় রাইবোজোম ও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম যুক্ত থাকে।
কাজ : (i) নিউক্লিয়াসের নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে। (ii) নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ অংশকে রক্ষা করে।
(b) নিউক্লিওলাস : এটি নিউক্লিয়াস মধ্যস্থ ঘন গোলাকার অংশ, যা অসংখ্য দানাদার ও সূত্রাকার অংশ নিয়ে গঠিত ।
কাজ : রাইবোজোম ও RNA (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) সংশ্লেষ করে।
(c) নিউক্লিওপ্লাজম : নিউক্লিয়াসের মধ্যে যে স্বচ্ছ অর্ধতরল পদার্ থাকে, তাকে নিউক্লিওপ্লাজম বা নিউক্লিয় রস বা ক্যারিওলিম্ফ বলে।
■ কাজ : ক্রোমাটিন সূত্র ও নিউক্লিওলাসের ধাত্ররূপে কাজ করে।
(d) নিউক্লিয় জালিকা : নিউক্লিয় প্লাজমে যুগ্ম জালকাকার গঠন দেখা যায়, একে নিউক্লিয় জালিকা বলে। নিউক্লিয় জালিকার এক-একটি সূত্রাকার অংশকে ক্রোমাটিন সূত্র বলে। কোশ বিভাজন কালে প্রতিটি ক্রোমাটিন সূত্র কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম গঠন করে। ক্রোমোজোম মধ্যস্থ জিন পিতামাতার থেকে তাদের সন্তান- সন্ততির মধ্যে বংশগতবৈশিষ্ট্য বহন করে।
কাজ : (i) কোশ বিভাজন কালে ক্রোমোজোম গঠন করে। (ii) বংশগত পদার্থ (DNA ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) বহন করে।
নিউক্লিয়াসবিহীন কোশ : উদ্ভিদের সিভনল এবং উট ও লামা ব্যাতীত সকল মেরুদণ্ডী প্রাণীর লোহিত রক্তকণিকা।
বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশ : ভাউকেরিয়া, রাইজোপাস (ছত্রাক) এবং ওপালিনা (প্রাণী)।
সিনোসাইট : উদ্ভিদের বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশকে সিনোসাইট বলে।
সিনোসাইটিয়াম: প্রাণীদের বহু নিউক্লিয়াসযুক্ত কোশকে সিনোসাইটিয়াম বলে।
প্রত্যেক প্রজাতিভুক্ত জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা 46টি।
নিউক্লিয়াসের কাজ : (i) কোশের সকল জৈবিক ক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই নিউক্লিয়াসকে কোশের মস্তিষ্ক বলে।
(ii) বংশগত পদার্থ (DNA) কোশ থেকে কোশে এবং জীব থেকে জীবে বহন করে। (iii) RNA ও প্রোটিন সংশ্লেষ করে।
মাইট্রোকনড্রিয়া (Mitochondria) :
সংজ্ঞা : আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে দ্বি-একক পর্দাবেষ্টিত গোলাকার, ডিম্বাকার বা দণ্ডাকার যে সমস্ত অঙ্গাণুতে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাদের মাইটোকনড্রিয়া বলে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) প্রতিটি মাইটোকনড্রিয়া দুটি পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে।
(ii) বাইরের পর্দাটিকে বহিঃপর্দা এবং ভিতরের পর্দাকে অন্তঃপদা বলে।
(iii) উভয় পর্দার মাঝখানের ফাঁকা স্থানটিকে বহিঃপ্রকোষ্ঠ বা পেরিমাইটোকনড্রিয়াল স্থান বলে।
(iv) বহিঃপর্দার বাইরের গায়ে বৃত্তহীন গোলাকার দানা থাকে, তাদের বহিঃস্থ দানা বা পারসনের অধঃএকক বলে।
(v) অন্তঃপর্দা ঘেরা মাঝখানের প্রকোষ্ঠটিকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে।
(vi) ধাত্রে প্রোটিন দানা, রাইবোজোম, RNA, DNA ও বিভিন্ন ধরনের উৎসেচক থাকে।
(vii) মাইটোকনড্রিয়ার অন্তঃপর্দাটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে অসংখ্য আঙুলের মতো প্রবর্ধক গঠন করে এদের ক্রিস্টি (একবচনে ক্রিস্টা) বলে।
কাজ : (i) মাইটোকনড্রিয়ার মধ্যে শক্তি উৎপন্ন হয়, মাইটোকনড্রিয়াকে কোশের শক্তিঘর বলে। (ii) মাইটোকনড্রিয়ায় শ্বসনের ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলি সম্পন্ন হয়। (iii) পাচিত সরল খাদ্য, অর্থাৎ গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি জারিত হয়ে ATP উৎপন্ন হয়। (iv) কিছু পরিমান DNA, RNA উৎপন্ন করা করাও এর কাজ । (v) স্নেহ বিপাক ও প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করাও এর কাজ ।
আদি কোশ ও স্তন্যপায়ীদের পরিণত লোহিত রক্তকণিকায় মাইটোকনড্রিয়া থাকে না ৷
জীবদেহের বিভিন্ন কোশে মাইটোকনড্রিয়া 1 থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত থাকতে পারে।
এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা (Endoplasmic reticulum) :
সংজ্ঞা : আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে যেসব অসংখ্য, পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত একক পর্দাবেষ্টিত নালিকার মতো অঙ্গাণুর দ্বারা অনিয়মিত প্রকোষ্ঠে বিভক্ত থাকে, তাদের এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বা এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম বলে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা কোশপর্দা বা নিউক্লিয় পর্দা থেকে সৃষ্টি হয়। (ii) এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা তিন রকমের গঠন যুক্ত হয়,যথা—সিস্টারনি, টিউবিউল এবং ভেসিকল। (iii) সিস্টারনিগুলি দেখতে লম্বা, চ্যাপটা থলির মতো এবং শাখাহীন। (iv) টিউবিউলগুলি দেখতে শাখান্বিত নালির মতো। (v) ভেসিকলগুলি দেখতে গোলাকার বা ডিম্বাকার থলির মতো। (vi) যে সকল এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার গায়ে রাইবোজোম দানা যুক্ত থাকে, তাদের অমসৃণ বা দানাযুক্ত এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে এবং যাদের গায়ে রাইবোজোম দানা যুক্ত থাকে না, তাদের মসৃণ বা দানাবিহীন এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা বলে।
কাজ : (i) সাইটোপ্লাজমের কাঠামো গঠন করে। (ii) সাইটোপ্লাজমের রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি পৃথক রাখে। (iii) কোশীয় বস্তুর পরিবহণ ও সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
গলগি বস্তু (Golgi bodies) :
সংজ্ঞা : আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে একক পর্দা বেষ্টিত চ্যাপটা থলির মতো এবং ক্ষুদ্র গহ্বরের মতো যেসবঅঙ্গাণু পরস্পর সমান্তরালভাবে সজ্জিত থাকে, তাদের গলগি বস্তু বলে।উদ্ভিদ কোশের গলগি বস্তুকে ডিকটিওজোম বলে। এটি এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকা থেকে সৃষ্টি হয়।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : গলগি বস্তু তিন প্রকার গঠন সমন্বয়ে গঠিত। যথা— সিস্টারনি, মাইক্রোভেসিকল এবং ভ্যাকুওল।
(i) সিস্টারনি ঃ এগুলি একক-পর্দাবেষ্টিত তরল পদার্থপূর্ণ চ্যাপটা থলির মতো। এগুলি সংখ্যায় 3-20টি হয় এবং সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে ।
(ii) মাইক্রোভেসিকল : সিস্টারনিগুলির পরিধির দিকে তরল পদার্থপূর্ণ যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলাকার থলির মতো অঙ্গাণুগুলি থাকে, তাদের মাইক্রোভেসিকল বলে।
(iii) ভ্যাকুওল ঃ সিস্টারনিগুলির প্রান্তদেশে যে বৃহৎ গোলাকার গহ্বরগুলিথাকে, তাদের গলগিয়ান ভ্যাকুওল বলে।
কাজ : (i) হরমোন, উৎসেচক, মিউকাস ইত্যাদি ক্ষরণ করে। (ii) উৎসেচক, যোগকলার ধাত্র, ক্ষরিত প্রোটিন ইত্যাদি পরিবহণে সাহায্য করে। (iii) বিভিন্ন বস্তুর সঞ্চয় ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। (iv) কোশপ্রাচীরগঠন করে।
রাইবোজোম (Ribosome) :
সংজ্ঞা : আদি ও আদর্শ কোশে অবস্থিত পর্দাবিহীন রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন নির্মিত যে কণাগুলির মধ্যে প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়, তাদের রাইবোজোম বলে।
অবস্থান : আদি কোশে রাইবোজোম সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবেঅবস্থান করে।
আদর্শ কোশে এরা সাইটোপ্লাজমে, নিউক্লিওলাসে এবং নিউক্লিয় পর্দা ও এন্ডোপ্লাজমীয় জালিকার বাইরে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের ভিতরে থাকে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : (i) রাইবোজোম আকারে উপবৃত্তাকার এবং দু-পাশ থেকে ঈষৎ চ্যাপটা। (ii) প্রতিটি রাইবোজোম দুটি উপএকক বা অধঃএকক নিয়ে গঠিত। বড়ো অধঃএককটি গোলাকার এবং ছোটো অধঃএককটিডিম্বাকার হয়। (iii) রাইবোজোমের রাসায়নিক উপাদান হল প্রোটিনও রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। (iv) একাধিক রাইবোজোম যুক্ত হয়ে যে রাইবোজোম শৃঙ্খল তৈরি হয়, তাকে পলিরাইবোজোম বা পলিজোম বলে।
কাজ : (i) রাইবোজোমের প্রধান কাজ প্রোটিন সংশ্লেষ করা। তাই রাইবোজোমকে প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলে। (ii) স্নেহপদার্থের বিপাকে সহায়তা করে।
লাইসোজোম :
সংজ্ঞা : প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত, একক পর্দাবেষ্টিত, উৎসেচকপূর্ণ, প্রায় গোলাকার থলির মতো অতি ক্ষুদ্র যেসব অঙ্গাণু অন্তঃকোশীয় ও বহিঃকোশীয় পরিপাকে সাহায্য করে, তাদের লাইসোজোম বলে।
• মানুষের লোহিত রক্তকণিকা ছাড়া প্রায় সব প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে লাইসোজোম থাকে। সাধারণ উদ্ভিদ কোশে লাইসোজোম থাকে না। তবে কিছু কিছু উদ্ভিদ কোশে, যেমন—পেঁয়াজের বীজকোশে, তামাক ও ভুট্টার চারা উদ্ভিদকোশে এবং সমাঙ্গদেহীভুক্ত কয়েকটি উদ্ভিদকোশে লাইসোজোম বর্তমান। ক্ষরণকারী কোশে এবং শ্বেত রক্তকণিকা কোশে এদের সংখ্যা বেশি থাকে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : লাইসোজোম সাধারণত গোলাকার গহ্বর বা থলির মতো। প্রতিটি লাইসোজোম দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা— আবরণী বা সীমাস্থ পর্দা এবং ধাত্র বা ম্যাটিক্স।
(i) আবরণী বা সীমাস্থ পর্দা : লাইসোজোম লাইপোপ্রোটিন নির্মিত একক পর্দা দিয়ে বেষ্টিত থাকে, তাকে আবরণী বা সীমাস্থ পর্দা বলে।
(ii) ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স : লাইসোজোমের গহ্বরে তরল থাকে, তাকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বলে। ধাত্রে প্রায় 50 রকমের উৎসেচক, দানাদার বস্তু, অপাচ্যবস্তু ইত্যাদি থাকে।
কাজ : (i) লাইসোজোম অন্তঃকোশীয় পরিপাকে সাহায্য করে। কোশে গৃহীত খাদ্য লাইসোজোম নিঃসৃত উৎসেচক দ্বারা পাচিত হয়। (ii) লাইসোজোম উৎসেচক নিক্ষেপ করে বহিঃকোশীয় পরিপাকে সাহায্য করে। (iii) ব্যাঙাচির রূপান্তরকালে লাইসোজোম নিঃসৃত উৎসেচক ব্যাঙাচির লেজ, ফুলকা ইত্যাদি পাচিত করে। এই প্রক্রিয়াকে অটোফ্যাগি বলে। (iv) শ্বেত রক্তকণিকার লাইসোজোম উৎসেচক নিঃসরণ করে বিভিন্নবহিরাগত প্রোটিন, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদিকে ধ্বংস করে।
আত্মঘাতী থলি : লাইসোজোম কোশ মধ্যস্থ বিভিন্ন অঙ্গাণুগুলিকে পাচিত করে কোশের মৃত্যু ঘটায়, তাই লাইসোজোমকে আত্মঘাতী থলি বা সুইসাইড ব্যাগ বলে।
সেন্ট্রোজোম (Centrosome ) :
সংজ্ঞা : প্রাণীকোশের সাইটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াসের নিকটে পর্দাবিহীন তারকার মতো যে কোশ-অঙ্গাণু প্রাণীকোশ বিভাজনের সময় বেমতন্তু গঠন করে, তাকে সেন্ট্রোজোম বলে।
গঠন বা বৈশিষ্ট্য : সেন্ট্রোজোম চারটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা—
সেন্ট্রিওল : সেন্ট্রোজোমের কেন্দ্রে দু-মুখ খোলা পিপের মতো যে দুটি অংশ পরস্পর সমকোণে অবস্থান করে, তাদের সেন্ট্রিওল বলে।
(i) কাইনোপ্লাজম : এটি সেন্ট্রোজোমের কেন্দ্রে সাইটোপ্লাজমীয় অংশ ।
(iii) সেন্ট্রোস্ফিয়ার : এটি সেন্ট্রোজোমের বাইরের দিকে অবস্থিতসাইটোপ্লাজম।
(iv) অ্যাস্ট্রার রশ্মি :সেন্ট্রোস্ফিয়ার থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মিবৎ অণুনালিকাসমূহ।
কাজ : (i) প্রাণীকোশ বিভাজনকালে বেম তন্তু গঠন করে। সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলাযুক্ত কোশে সিলিয়া ও ফ্ল্যাজেলা সৃষ্টি করে। (iii) শুক্রাণুর পুচ্ছ গঠন করে।
প্লাসটিড (Plastids) :
উদ্ভিদ কোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তাকারে ছড়িয়ে থাকা পর্দাবিশিষ্ট গোলাকার, ডিম্বাকার অনন্য আকার বিশিষ্ট যেসব অঙ্গাণু উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুত, বর্ণ গঠনে এবং খাদ্য সঞ্চয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে তাদেরকে প্লাস্টিড (plastid) বলে।
• সাধারণ প্রাণীকোশে প্লাসটিড থাকে না। কিন্তু ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা প্রভৃতি
• এককোশী প্রাণীর দেহে প্লাসটিড (ক্লোরোপ্লাসটিড) থাকে ।
প্লাসটিডের শ্রেণিবিভাগ : গঠন, কাজ ও রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি অনুসারে প্লাস্টিড নিম্নলিখিত প্রকারের হয়- প্লাসটিড
বর্ণযুক্ত:
|
বর্ণহীন
|
ক্লোরোপ্লাস্ট (সবুজ বর্ণের)
ক্রোমোপ্লাস্ট (সবুজ ব্যতীত অন্য বর্ণের)
রোডোপ্লাস্ট (লাল)
ফিয়োপ্লাস্ট (বাদামি
জ্যান্থোপ্লাস্ট (হলুদ)
ক্যারোটিনোপ্লাস্ট (কমলা)
|
অ্যামাইলোপ্লাস্ট (শ্বেতসার সঞ্চয় করে)
অ্যালিউরোনপ্লাস্ট (প্রোটিন সঞ্চয় করে)
অ্যালাইও প্লাস্ট (ফ্যাট সঞ্চয় করে)
|
A. ক্লোরোপ্লাস্ট বা ক্লোরোপ্লাসটিড :
সংজ্ঞা : সবুজ উদ্ভিদকোশের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত দ্বি-একক পর্দাবেষ্টিত গোলাকার, ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার, ফিতাকৃতি ইত্যাদি আকৃতিবিশিষ্ট এবং ক্লোরোফিলযুক্ত যে প্লাসটিড উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, তাদের ক্লোরোপ্লাস্ট বলে।
অবস্থান : উদ্ভিদের যে-কোনো সবুজ অংশে এই প্লাসটিড থাকে।
কাজ : (i) সালোকসংশ্লেষে সহায়তা করে। (ii) ক্লোরোফিল সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে (ATP) রূপান্তরিত করে।
B. ক্রোমোপ্লাসটিড (Chromoplastid) :
■ সংজ্ঞা : সবুজ বর্ণের প্লাসটিড ছাড়া অনন্যান্য বর্ণের প্লাসটিডদের ক্রোমোপ্লাসটিড বলে।
■ অবস্থান : উদ্ভিদের রঙিন অংশে, যেমন—ফুলের পাপড়ি, পাকা ফলের ত্বক, গাজর, বিট ইত্যাদিতে অবস্থান করে।
কাজ : এই প্রকার প্লাসটিড ফুল ও ফলের বর্ণ গঠন করে পরাগযোগ এবং ফলের বিস্তারের সহায়তা করে।
C. লিউকোপ্লাসটিড (Leucoplastid) :
সংজ্ঞা : বর্ণহীন প্লাসটিডদের লিউকোপ্লাসটিড বলে। এরা হচ্ছে বর্ণহীন প্লাস্টিড; অর্থাৎ এদের দেহ থেকে কোনো ধরনের রঞ্জক তৈরি হয় না।
■ অবস্থান : লিউকোপ্লাসটিড উদ্ভিদের মূলের কোশে এবং উদ্ভিদের যেসব অঙ্গের কোশে সূর্যের আলো পৌঁছোয় না সেখানে অবস্থান করে।, যেমন- ভূ-নিম্নস্থ কান্ড প্রভৃতি স্থানে থাকে ।
■ কাজ : অ্যামাইলোপ্লাস্টে শ্বেতসার, এলাইওপ্লাস্টে ফ্যাট এবং প্রোটিনোপ্লাস্টে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সঞ্চিত থাকে।
প্লাস্টিডের কাজ:
• কোষে শ্বেতসার, চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
• পাতা রঙিন ও ফুলকে সৌন্দর্য বর্ধিত করে থাকে।
• কোষে ফটোফসফোরাইলেশন ও ফটোরেসপিরেশনে অংশগ্রহণ করে।
• সূর্যের আলোর উপস্থিতে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে থাকে।
কোশগহ্বর বা ভ্যাকুওল (Vacuole) :
সংজ্ঞা : আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে যেসব সাইটোপ্লাজম- বিহীন স্থান বা গহ্বর থাকে, তাদের কোশগহ্বর বা ভ্যাকুওল।
গঠন : ভ্যাকুওল দেখতে অনেকটা গহ্বরের মতো। প্রাণীকোশের ভ্যাকুওলগুলি আকারে ছোটো হয়। অনেক সময় প্রাণীকোশে ভ্যাকুওল থাকে না। অপরিণত উদ্ভিদকোশে ভ্যাকুওলের সংখ্যা অনেক এবং আকারে ক্ষুদ্র হয়। পরিণত উদ্ভিদকোশে ভ্যাকুওলগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি বড়ো ভ্যাকুওল সৃষ্টি করে; ফলে নিউক্লিয়াসসহ সাইটোপ্লাজম কোশপ্রাচীরের ভিতরের দিকে পরিধি বরাবর বিন্যস্ত থাকে। প্রাণীকোশের ভ্যাকুওলের বাইরে পর্দাদ্বারা আবৃত থাকে, কিন্তু উদ্ভিদকোশে ভ্যাকুওলের বাইরে কোনো পর্দা থাকে না। ভাজক কলার কোশে কোনো গহ্বর থাকে না।
কাজ : (i) এককোশী প্রাণীকোশে কোশগহ্বরে খাদ্য, রেচন পদার্থ, জল প্রভৃতি সঞ্চিত থাকে।
(ii) উদ্ভিদকোশের কোশগহ্বর উদ্ভিদকোশের আকারের বৃদ্ধি বা হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করে।
বিভিন্ন কোশ-অঙ্গাণুর কাজ :
কোশ-অঙ্গাণু
|
সৃষ্টিতে সাহায্য করে
|
1. কোশপ্রাচীর
|
1. গলগি বস্তু ও এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম।
|
2. কোশপর্দা
|
2. সাইটোপ্লাজমের বাইরের স্তর রূপান্তরিত হয়।
|
3. মাইটোকনড্রিয়া
|
3. প্রধানত কোশপর্দা ও নিউক্লিয় পর্দা থাকে। তবে
মাইটোকনড্রিয়া থেকেও
মাইটোকনড্রিয়া
সৃষ্টি হতে পারে।
|
4. গলগি বস্তু
|
4. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম।
|
5. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম
|
5. কোশপর্দা থেকে।
|
6. রাইবোজোম
|
6. নিউক্লিওলাস।
|
7. লাইসোজোম
|
7. এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকিউলাম।
|
৪. নিউক্লিয়াস
|
৪. নিউক্লিয়াস।
|
9. সেন্ট্রোজোম
|
9. সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল থেকে।
|